‘দ্য ওয়েল ফিনিশার’ শেখ হাসিনার বহুমুখী লড়াই

609

Published on ডিসেম্বর 16, 2022
  • Details Image

হায়দার মোহাম্মদ জিতু: 

শ্রীপান্থের নিরীক্ষাধর্মী রচনা ‘ঠগী’ উপমহাদেশীয় সংস্কৃতিতে একশ্রেণির ডাকাত দলের জীবন-সাইকেল। কেস স্টাডিসম্পন্ন এই রচনায় দেখা যায়, বর্বরভাবে মানুষ খুন করে তার সমাধিস্থলের ওপরই সাবলীলভাবে খাবার আয়োজন ও গ্রহণ করতে। এর কারণ, এতে ওই স্থানের মাটির যেমন শক্ত হয় তেমনি কেউ ধারণাই করতে পারে না যে সেখানে কেউ শায়িত থাকতে পারে। এ ধরনের কৃতকর্ম স্বাভাবিক নিয়মে বর্বর ঠাওর হলেও ‘ঠগী’ সম্প্রদায়ের কাছে তা ছিল উপার্জন ও জীবিকার উৎস।

মানুষ হত্যাকে নিজেদের জীবিকা কিংবা ক্ষমতা হরণের উপাদেয় হিসেবে গ্রহণকারী একালের প্ল্যাটফর্ম বিএনপি-জামায়াত। শুধু ক্ষমতা হরণের জন্য আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে খুন, হত্যার বীভৎস ট্র্যাজেডি মঞ্চস্থ করেছিল এরা। বিস্ময়কর হলো, ঠগী সম্প্রদায় যেমন লুট, হত্যাকে সাবলীল ও জীবিকা হিসেবে নিয়েছিলেন ঠিক তেমনি বিএনপি-জামায়াত করেছে! ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দেশের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে একযোগে যে পেট্রোলবোমার হত্যালীলা চালায় তা তা-ই প্রমাণ করে।

এই আগুন সন্ত্রাসের কারণেই প্রায় ২৪ হাজার মানুষ আমৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। প্রায় ৫০০ মানুষ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ পেট্রোলবোমা আবিষ্কারের ইতিহাস বলে, এটিকে ব্যবহার করা হতো বৃহৎশক্তির বিপক্ষে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে। সে হিসেবে বিএনপির কাছে বুদ্ধিজীবীদের প্রশ্ন উত্থাপন আবশ্যক। দূরপাল্লার ঘুমন্ত বাসযাত্রী কিংবা চলন্ত গাড়ির দরজা বাইর থেকে বন্ধ করে সেখানে পেট্রোলবোমা হামলা করে মানুষ পুড়িয়ে মারা এসব কেমন গণতন্ত্রের উদাহরণ?

রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অনেক সময় বিশাল কর্মী বাহিনীর মাঝে কিছু অতি উৎসাহীদের কারণে সংগঠন, দল বিপাকে পড়ে। সেই সময়কার পেট্রোল-সন্ত্রাস বিএনপি-জামায়াতের এমন কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা কিনা কিংবা স্বকীয় পন্থা, এই বিষয়টির পক্ষে সঠিক অবস্থান পরিষ্কার করা জরুরি। কারণ, এমন পুনরাবৃত্তি করতে চাইলে দেশের সব মানুষ এই বিষদাঁত ভেঙে ফেলবে।

হাস্যকর হলো, এসব বিষয়ে নিজেদের অবস্থান সুস্পষ্ট না করে এরা উল্টো বাইরের হায়ার করা ‘দুলাভাই’ খুঁজতে তৎপর। সাধারণ জ্ঞান বলে, ঘরে না পারলে বাইরে দৌড়াতে হয়। তারা এখন তা-ই করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মগুণে বিএনপির হাতে অবশ্য এছাড়া কোনও পথও খোলা নেই। কারণ, টানা ১৪ বছরের শাসনামলে শেখ হাসিনা মানুষের মাঝে ক্ষমতায় আসার চাবি হিসেবে উন্নয়ন সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। যা বিএনপির নেই। বরং পরিসংখ্যানের হিসাবে করলে ১৯৯৬-এ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে যা রেখে গিয়েছিল, ২০০১-এ এসে বিএনপি তা গ্রাস করে ফেলে। তাছাড়া টানা ১৪ বছরের সময়ে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুৎসহ প্রায় সব খাতকে শেখ হাসিনা এমন জায়গায় নিয়ে গেছেন যে এই সময়ে কয়েকটা জেনারেশন ভোটার হয়ে উঠেছে এবং তাদের কাছেও এখন বাংলার অবিকল্প সারথি একক শেখ হাসিনা।

মুক্তিযুদ্ধে জাতিকে এককভাবে নেতৃত্বদানকারী ও সংগঠিতকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। স্বাভাবিকভাবে সিনিয়র ও তার পরবর্তী জেনারেশন বঙ্গবন্ধুর কারণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভোটার। বাকি ছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা পরবর্তী কয়েকটা প্রজন্ম যারা স্বৈরশাসনের ও অন্ধকার যুগে বেড়ে উঠেছে তারাও শেখ হাসিনার উন্নয়ন, সততা ও সংযমে ঘুরে তাকাচ্ছে। অর্থাৎ বাঙালির ভাত ও ভোটের অধিকার সমুন্নত রাখতে যে একক শেখ হাসিনাই ভরসা তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বুঝে উঠছে।

বিএনপি-জামায়াত সব সরকারি-বেসরকারি চাকরিকে দলীয় ও অর্থ কব্জায় জিম্মি করে রেখেছিল। অজেয় শেখ হাসিনা তরুণ প্রজন্মের জন্য এই দুর্বৃত্তায়নের বৃত্ত ভেদ করেছেন। আত্মপ্রত্যয়ী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থেকেও দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বুলেট-গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচার করে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন। ক্ষমতার এমন সহনশীল নজির বিশ্ব ইতিহাসে নেই।

দুঃখজনক হলো, বাঙালির গর্বের ধন পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, সারা দেশে একযোগে ১০০ সেতু উদ্বোধন, বিনামূল্যে করোনাভাইরাসের টিকা প্রদান, গৃহহীনদের ঘর প্রদান, বৈশ্বিক মন্দায় একশ্রেণির মানুষকে রক্ষায় খোলাবাজারে নিত্যপণ্যের ব্যবস্থা করা এসব নিয়ে প্রকাশ করবার তাগিদ নেই। অথচ এই কাজগুলোকে তৃণমূল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া এক ধরনের নৈতিক দায়বদ্ধতার ভেতর পড়ে। উল্টো এই মহতি কাজগুলোকে গুজব, মিথ্যা নিন্দার কাঁটায় বিদ্ধ করতে ‘অপশক্তি, দুরাশক্তি, বিরোধীশক্তি’ সব একযোগে উঠেপড়ে লেগেছে।

উপমহাদেশীয় সংস্কৃতি এখনও গল্পের আনন্দে, আড্ডার ভিড়ে তথ্যের আদান-প্রদান হয়। বিএনপির এই নারকীয় আগুন-সন্ত্রাস, হত্যা, গুমের বিপরীতে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নমূলক কাজগুলোকে বায়োস্কোপ, চিত্রকর্ম, পথনাটক, গীতিনাট্য, লোকনাট্যের আদলে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ আছে। গাঁয়ের একজন রিকশাওয়ালা, ভ্যানচালক, শ্রমজীবী মানুষ ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবে কি দিলেন তা দেখবে না। যদিও এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতেও শত্রুপক্ষ এগিয়ে।

ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ভাষায় ‘টার্গেট অডিয়েন্স’ করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী এগোনো জরুরি। ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের এই কাজ করার সুযোগ আছে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এখন সংস্কৃতি চর্চামূলক বিভাগ খোলা হয়েছে এবং সেখানকার শিক্ষার্থীরাও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কাজেই এ ধরনের কাজগুলোকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।

আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘অপশক্তি, দুরাশক্তি, বিরোধীশক্তি ও ঠগীর উত্তরসূরিরা একজোট হয়ে শেখ হাসিনাকে মোকাবিলা করতে চাইছে। এর কারণ একটাই, শেখ হাসিনা ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ নিয়ে এগোতে চায়। অর্থাৎ লুটেরাদের একক চ্যালেঞ্জ ‘দ্য ওয়েল ফিনিশার’ শেখ হাসিনা। অদম্য শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে দিয়েছেন। এখন প্রয়োজন সব প্রোপাগান্ডা বা গুজব রুখে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়া। এও সম্ভব এবং তা ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে।

লেখক: সাবেক প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।

 সৌজন্যেঃ বাংলা ট্রিবিউন

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত