বিএনপির গণতন্ত্রের নমুনা: আওয়ামী লীগের কর্মসূচি পণ্ড করতে ৭ দিনে ১০ হাজার নেতাকর্মীকে জেলে ঢুকায় খালেদার সরকার

893

Published on জানুয়ারি 1, 2023
  • Details Image

২০০১ সালের অক্টোবরে সরকার গঠনের পর থেকেই দেশজুড়ে লুটপাট, চাঁদাবাজি, নির্যাতন শুরু করে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা। এমনকি সরকারের প্রথম দুই বছরেই সরকারি সম্পদ লুট, টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতির কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশের অর্থনীতি। লুটপাট ও নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করলে গণগ্রেফতার করা হয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। এমনকি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের চারপাশে কাটাতার দিয়ে ঘিরে দখলে নেয় খালেদা জিয়ার পুলিশ বাহিনী। রাস্তার সাধারণ মানুষ, চাকরিপ্রার্থী, ক্ষুদ্রব্যবসায়ী, ভাসমান হতদরিদ্ররাও রেহাই পায়নি বিএনপি-জামায়াত সরকারের এই অমানবিক রোষানল থেকে। সারা দেশে কমপক্ষে ১০ হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে জেলে ঢুকানো হয়।

২০০৪ সালের ২ এপ্রিলের প্রথম আলো পত্রিকা থেকে জানা যায়, তারেক রহমানের সন্ত্রাস ও দুর্নীতির প্রতিবাদে হাওয়া ভবনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পণ্ড করতে পুরো ঢাকা শহরে পুলিশ ও বিজিবি নামানো হয় খালেদা জিয়ার নির্দেশে। এমনকি বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের চারপাশে কাটাতার দিয়ে ঘেরাও দেওয়া হয়। গুলিস্তান, মৌচাক, পল্টন, মতিঝিল ও রাসেল স্কয়ারে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিলে সরাসরি নেতাদের লক্ষ্য করে টিয়ার ছোড়ে এবং ব্যাপক লাঠিচার্জ করে পুলিশ। সরকারের সরাসরি নির্দেশে গ্রেফতার করা হয় ৭০ জন নেতাকর্মীকে। এমনকি সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীরাও পথে পথে হেনস্তার শিকার হন। ঢাকা শহরে অঘোষিত কার্ফূ জারি করে খালেদা জিয়ার সরকার।

বিএনপির সন্ত্রাসী বাহিনীর মহড়া এবং সরকারের পুলিশি আচরণে সারা ঢাকা শহরের কর্মজীবী ও সাধারণ মানুষ যখন ঘরবন্দি হয়ে পড়ে, ঠিক সেসময় হাওয়া ভবনের চারপাশে বিশেষ পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করে ক্রিকেট খেলে জনগণের দুর্ভোগ উদযাপন করে তারেক রহমান। এমনকি তারেকের নির্দেশে রাতভর বাসায় তল্লাশির নামে সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড করে দেয় সরকার। এমনকি ৬২ জন নারী কর্মীকে প্রকাশ্যে পুরুষদের দ্বারা পিটিয়ে হেনস্তা করে আদালতে চালান করার মতো বর্বরতা দেখানো হয়।

২৩ এপ্রিলের প্রথম আলো পত্রিকা থেকে জানা যায়- সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দমাতে আওয়ামী লীগ দমনের নামে প্রতিদিন গড়ে হাজার খানেক মানুষকে গ্রেফতার করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। বাস ও লঞ্চ টার্মিনালগুলো থেকে সাধারণ যাত্রীদের ধরে নিয়ে চালানো হয় নির্যাতন। আদালত সূত্রে জানা যায়, ৫৪ ধারায় গণগ্রেফতার দেখানো ব্যক্তিদের অধিকাংশই সাধারণ কর্মজীবী এবং অসহায় মানুষ। ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষকে আটকে রাখায় অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। আওয়ামী লীগের প্রতিবাদী পদযাত্রা পণ্ড করতে দফায় দফায় সিনিয়ন নেতা ও নারী নেত্রীদের ওপর লাঠিচার্জ ও গ্রেফতার অভিযান চালায় তারা।

২৪ এপ্রিল প্রথম আলোর সংবাদ জানায়, ৫ দিনে ৭ হাজারের বেশি মানুষকে আটক করেছে সরকার। তাদের অধিকাংশই একেবারেই নিরীহ মানুষ। কেউ চাকরির পরীক্ষা দিতে এসে, কেউ চা বিক্রির সময়, কেউবা স্বজননের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার সময় আটকের শিকার হন। ঘর থেকে বের হয়ে অনেকে বাড়িতে ফিরে না যাওয়ায় তাদের খোঁজ পেতে আদালত চত্বরে ভিড় জমায় তাদের স্বজনরা। দেশজুড়ে বিরাজ করে এক আতঙ্কময় সময়। ঢাকা ছাড়াও রাজশাহী, বরিশাল, মেহেরপুর, খুলনা, সিলেট, শরীয়তপুর, কিশোরগঞ্জ, যশোর, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আরো কয়েক হাজার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে খালেদা জিয়ার পুলিশ বাহিনী। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি তারা বেসরকারি কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষদেরও গণগ্রেফতার করে।

২৫ এপ্রিলের প্রথম আলো জানায়, সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে সরকারের এই গণগ্রেফতার। ৫৪ ধারাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যাপক অপব্যবহার করেছে সরকার। চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েচে মানবাধিকার ও আইন। ফলে কেন্দ্রীয় কারাগারে ঠাসাঠাসি করে রাখা হয়েছে ধারণক্ষমতার চাইতে ছয় গুণ বেশি বন্দি। দুদিন জেলে থেকে আদালতের নির্দেশে ছড়াা পাওয়া কয়েকজন নিরপরাধ ব্যক্তি জানান, আওয়ামী লীগ দমনের নামে পথচারী-বাসযাত্রী-ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী-নারী সবাইকে গণহারে গ্রেফতার করা হয়েছে। কারাগারগুলোর ভেতরে সাধারণ মানুষের কান্নার রোল এবং বাইরে স্বজনদের দীর্ঘ লাইনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সবাই। এমনকি সপ্তাহব্যাপী গভীর রাতে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে গিয়ে ঘুম থেকে তুলে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে সারা দেশের হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত