বিএনপি-জামায়াত প্রার্থীদের ধর্মব্যবসা: জঙ্গিদের বক্তব্য শুনলে হজ করা লাগবে না বলে ফতোয়া

1511

Published on জানুয়ারি 29, 2023
  • Details Image

ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করাটা বিএনপি-জামায়াতের পুরোনো অভ্যাস। সরলপ্রাণ মানুষকে ধর্মের ধোঁকা দিয়ে বিভ্রান্ত করে নাশকতার কাজে লিপ্ত করায় তারা। এমনকি নির্বাচন এলেই জমজমাট হয়ে ওঠে তাদের এই নোংরা ধর্ম ব্যবসার। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সরাসরি উস্কানিতে ইসলামের মূল পাঁচ স্তম্ভেও আঘাত হেনেছে তারা। হজের মতো পবিত্র কর্মকে নিয়েও ফতোয়া দিতে দ্বিধা করেনি উগ্রবাদী জঙ্গিরা।

২০০১ সালের ৮ সেপ্টেম্বরের জনকন্ঠ পত্রিকা থেকে জানা যায়, তৎকালীন সদ্য-সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নির্বাচনের জন্য নড়াইল-২ আসন থেকে তালেবান জঙ্গি মুফতি সহিদুলকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি-জামায়াত জোট। শেখ হাসিনাকে কোটালীপাড়ায় বোমা মেরে হত্যাচেষ্টাকারী নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড হলো এই জঙ্গি সহিদুল। এলাকায় তার পরিচিতি একজন উগ্রবাদী জঙ্গি হিসেবে। শেখ হাসিনার নির্বাচনি আসনে তাকে হত্যাচেষ্টাকারী চক্রকে মনোনয়ন দিয়ে আবারো নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল খালেদা জিয়া।

নির্বাচনি প্রচারণার সময় দেখা যায়- শেখ হাসিনাকে নিয়ে অশালীন বক্তব্য দিতে থাকে এই সহিদুল। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে জঙ্গি ট্রেনিং নিয়ে কক্রবাজারের দুর্গম এলাকায় তালাবান কমান্ডারদের সাথে যোগসাজশ করে শিবির ক্যাডারদের অস্ত্রের ট্রেনিং দিতো তারা। এই তালেবান জঙ্গি নির্বাচনি প্রচারণা নেমে স্থানীয় জনগণকে তালেবান দ্বারা হামলা চালানোর হুমকি দিতে শুরু করে।

সারাদেশ থেকে তালেবানপন্থী কিছু মাদ্রাসাছাত্রকে নড়াইলে জড়ো করে সে। তারা প্রকাশ্যে স্লোগান দিতে থাকে- 'আমরা হবো তালেবান, বাংলা হবে আফগান'। হিন্দু অধ্যূষিত গ্রামগুলোতে গিয়ে তারা সংখ্যালঘুদের হুমকিধামকি দিতে থাকে। ফলে পুরো এলাকার মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়ে।

বক্তব্যে জঙ্গি নেতা ও বিএনপি-জামায়াত প্রার্থী সহিদুল বলে যে- ঢাকায় তালেবান আছে। দরকার হলে তাদের নড়াইলে নিয়ে আসা হবে। খোদার কসম খেয়ে প্রকাশ্য জনসভায় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, শেখ হাসিনা, সংবিধানকে নিয়ে অশালীন ও উগ্রবাদী বক্তব্য দিতে থাকে সে। স্থানীয় মুসলিমরা এসবের নিন্দা জানালেও তার অনুসারীদের সশস্ত্র মহড়ায় প্রতিবাদ করতে পারেনি কেউ।

উল্লেখ্য যে, ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে মারকাজুল ইসলাম নামক একটি এনজিও স্থাপন করেছিল জঙ্গি মুফতি হান্নানের ঘনিষ্ঠ জঙ্গি মুফতি সহিদুল। সেখান থেকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গাকেন্দ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রমের নামে তাদের জঙ্গি প্রশিক্ষণের তদারকি করা হতো। বিদেশ থেকে এজন্য প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করতো তারা। এছাড়াও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের গভীর অরণ্যে পাকিস্তানের উগ্রবাদী জঙ্গি কমান্ডার সেলিম শেরকু এবং মুফতি হান্নানের মাধ্যমে সারা দেশের দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডারদের অস্ত্রের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হতো।

শেখ হাসিনাকে বোমা পুঁতে হত্যাচেষ্টাকারী জঙ্গিদের ২০০১ সালে যেমন মনোনয়ন দিয়েছেন খালেদা জিয়া। তেমনি এর আগে ১৯৯৬ সালের সাজানো নির্বাচনেও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মনোনয়ন দিয়ে বিরোধীদলের আসনে বসিয়েছিলেন তিনি। এমনকি পরবর্তীতে ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা ও ২০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে হত্যার পর, মাঠে হামলা তত্ত্বাবধানকারী জঙ্গি মাওলানা তাজউদ্দীনকে গোপনে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয় খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান। এই হামলা পরিচালনার আগে যাবতীয় লজিস্টিক সাপোর্ট তারেকই দিয়েছিল বলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেফতার জঙ্গিরা শিকার করেছে। অথচ খালেদা জিয়া এই হামলার পর বলেছিল, শেখ হাসিনা ভ্যানিটি ব্যাগের মধ্যে করে বোমা নিয়ে গিয়েছিল। এরপর জজমিয়া নাটক সাজিয়ে এই জঘন্য হামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেছিল খালেদা জিয়া।

এমনকি ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়া প্রকাশ্যে বলতেন যে, আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে দেশ থেকে ইসলাম চরে যাবে। ঘরে ঘরে উলু ধ্বনি উঠবে। বিএনপি-জামায়াতকে ভোট দিলে ইসলামের খেদমত করা হবে, বেহেশতের টিকেট পাওয়া যাবে। এরকম কথা বলেও গ্রামের সরল মানুষদের বিভ্রান্ত করা হয়েছে একসময়। কিন্তু বাস্তবে কী হয়েচে তা আপনারা নিশ্চই জানেন। স্বাধীনতার পর মানুষের সঠিক ধর্ম শিক্ষার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার জায়গা বরাদ্দ, জুয়া নিষিদ্ধ, মহররমের সরকারি ছুটি ঘোষণা, বাঙালিদের হজে যাওয়ার ব্যবস্থা নিশ।চিত করা এসব কাজ খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করেছেন বঙ্গবন্ধু। পরবর্তীতে দেশে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠা, ইমাম-মুয়াজজিনদের জন্য বিশেষ ভাতা, মাসিক সন্মানি, মাদ্রাসায় উন্নয়নে জায়গা এবং শত শত কোটি টাকার অর্থ বরাদ্দ, মাদ্রাসার শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সাথে স্বীকৃতি দিয়ে চাকরির জন্য উপযোগী ঘোষণা এসবই করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা।

অথচ ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, সহজসরল মানুষদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ফেলে হাজার হাজার পরিবারকে অনাথ করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এবং তাদের মদতপুষ্ট উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো। মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা, গুলি-বোমা-পেট্রোল মেরে হাজার হাজার পরিবারকে এতিম করা, জোর করে চাঁদা আদায়, উগ্রবাদী স্লোগান দিয়ে মানুষের ওপর মানসিক নির্যাতন চালানো, সমাজকে জিম্মি করে ক্ষমতা দখলের নীলনকশা ছাড়া আর কী করেছে তারা? তাহলে এই নিকৃষ্ট ধর্মব্যবসায়ীদের কেন ভোট দেবেন আপনারা? ধর্ম শান্তির কথা বলে, ধার্মিক ব্যক্তি কখনো অশালীন কথা বলতে পারে না, প্রকৃত ধার্মিক ব্যক্তি কখনো অন্যের ক্ষতি করে না এবং নাশকতার জন্য উস্কানি দেয় না। এই ধর্মব্যবসায়ী, বর্বর খুনি, পিশাচদের প্রত্যাখ্যান করুন।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত