বিএনপি-জামায়াতের সিন্ডিকেট: নিত্যপণ্যের দাম প্রতিবছরই দ্বিগুণ হতো, এক বেলা খাবার কমাতে বাধ্য হয়েছিল মানুষ

1239

Published on মে 20, 2023
  • Details Image

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের ইতিহাসের জঘন্যতম মূল্য-সন্ত্রাসের ঘঠনা ঘটে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের হাওয়া ভবন সিন্ডিকেট মজুদদারি, আমদানি-রফতানি নিয়ন্ত্রণ এবং কালোবাজারির মাধ্যমে দেশের বাজারব্যবস্থাকে বিকল করে দেয়। ফলে প্রতিবছরই আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হতে থাকে খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপণ্যের মূল্য। যার পরিপ্রেক্ষিতে ৫ বছরে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে ৩ লাখ কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যায়। এমনকি অসহায় মানুষদের জন্য বরাদ্দ ওএমএস এবং টিসিবি-এর পণ্যও লুটপাট করে নিয়ে যায় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা।

দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে সর্বোস্তরের জনগণ দেশজুড়ে মাতম শুরু করলেও তাতে পাত্তাই দেননি তৎকালীন প্রদানমন্ত্রী ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কমানোর বা স্থিতিশিল রাখার জন্য কোনো উদ্যোগই নেননি তিনি তার পাঁচ বছরের শাসনামলে। বরং নিজ পুত্র ও দুর্নীতির বরপুত্র তারেক রহমানের পরামর্শে আমদানি-রফতানি, ডলার সঞ্চালন, ব্যাংকের তারল্য প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে বাজারকে আরো জটিল করে তোলেন। ফলে নিজের সম্পত্তি বিক্রি, সঞ্চয় ভাঙানো, এমনকি কর্মস্থল থেকে পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া প্রভৃতি করেও ঠিকমতো মাস চলতে ব্যর্থ হন সাধারণ মানুষ।

ফলে একবেলা একপ্লেট ভাত খেয়ে, অন্যের পুরনো ও ছেঁড়া কাপড় পরে বেঁচে থাকতে বাধ্য হন নিম্ন আয়ের মানুষরা। তিনবেলা থেকে খাদ্যগ্রহণ দুইবেলায় নামিয়ে আনেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিক্তরা। এমনকি উচ্চ মধ্যবিত্তরাও খাবার থেকে মাছ-মাংস বাদ দেন, এক আইটেম দিয়ে কোনোমতে তিনবেলা খেয়ে দিন-গুজরান। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতের মূল্যসন্ত্রাসীরা মাত্র ৫ বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যায়।

২০০১ থেকে ২০০৬: প্রতিবছর দ্বিগুণ হয়েছে খাদ্যের দাম, মাছ-মাংস ধরাছোঁয়ার বাইরে

২০০৪ সালের ৯ জুনের দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সংবাদে দেখা যায়, ২০০৩ সালের জুলাইতে বাজেটের পর থেকে ২০০৪ সালের জুন পর্যন্ত, এক অর্থবছরে ১২ থেকে ১৫ ধাপে সব ধরণের নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়ে ২৪৯.৩৩ শতাংশ। বছরের শুরুর তুলনার বছর শেষে প্রায় আড়াইশ শতাংশ দাম বৃদ্ধির ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ে প্রায় আড়াই গুণ।

রাজধানীর কাঁচাবাজারের বড় ব্যবসায়ীরা জানান, পিঁয়াজ-রসুন-আঁদা থেকে শুরু করে তের-মসলার মূল্য গড়ে বৃদ্ধি পায় ৭৩.৮০ শতাংশ। মাছের দাম বাড়ে গড়ে ৮৭.১৩ শতাংশ, কাঁচা তরকারির দাম বাড়ে প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং চালের দাম বাড়ে প্রায় ১২.৭৫ শতাংশ। ২০ টাকা কেজির আঁদার দাম ৫ গুণ বেড়ে হয় ১০০ টাকা, ১৪ টাকা লিটারের কেরোসিনের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ২৬ টাকা, সয়াবিনের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৩২ টাকা থেকে একলাফে ৫৮ টাকায় বিক্রি হয়।

ক্রেতারা জানান, ২০০৩ সালেও ১০০ টাকায় যে মাছ পাওয়া যেত তা এক বছরের মাথায় এসে ৩০০ টাকাতেও কেনা সম্ভব হয়নি। তরকারির বাজারেও আগুন। প্রতি মাসে গড়ে ১২৬ শতাংশ হারে দাম বেড়েছে তরকারির। ফলে বারবার ব্যয় সংকোচন করেও কুলিয়ে উঠতে পারেননি সাধারণ মানুষ। পুষ্টি নিশ্চিত হওয়া তো দূরের কথা, পেট ভরানোর মতো খাদ্য কিনতেও সঞ্চয় ভাঙাতে হয়েছে বা ধার-দেনা করতে হয়েছে চাকরিজীবীদের।

খালেদা জিয়ার অপশাসন: স্বাভাবিক ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ৮২ শতাংশ পরিবার

২০০৫ সালের ৩ আগস্টের পত্রিকার সংবাদে দেখা যায়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০১ সালে সরকার গঠনের পর থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ৪ বছরে দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় ৯০ শতাংশ, তারমানে সব নিত্যপণ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়। শুধু চালের দামই বৃদ্ধি পায় ৭২.৭ শতাংশ, ফলে ৪ বছরে শুধু চাল কিনতেই ক্রেতাদের অতিরিক্ত খরচ হয় ৭৫ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সমীক্ষা থেকে এই তথ্য জানা যায়।

২০০১ সালে খালেদা জিয়া সরকার গঠনের পর থেকে দেশজুড়ে লুটপাট ও অর্থপাচারের কারণে ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধি শুরু হয়। লাগামহীন হয়ে পড়ে বাজারব্যবস্থা। ফলে মাত্র চার বছরে, ২০০৫ সালে এসে দেখা যায়, সবকিছুর দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। একারণে স্বাভাবিক ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে দেশের ৮২ শতাংশ পরিবার। অর্থনীতি সমিতির সমীক্ষায় এই পরিস্থিতির জন্য সিন্ডিকেটভিত্তিক মূল্যসন্ত্রাসকে দায়ী করা হয়। বিএনপি-জামায়াত সরকার এবং হাওয়া ভবনের পৃষ্ঠপোষকতায় চাঁদাবাজি ও কমিশন খাওয়ায় মাধ্যমে দেশের বাজার থেকে প্রতিবছর কমপক্ষে ১ লাখ কোটি টাকা হাওয়া করে দেয়।

২০০৫ সালের ৪ মার্চের পত্রিকায় দেখা যায়, সার নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সরকারের কেলেঙ্কারী ও খাম্বা সিন্ডিকেটের লুটপাটের কারণে বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে কৃষিব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেলে দেশজুড়ে খাদ্যসঙ্কট হয়। ফলে আপৎকালীন খাদ্য মজুদ শেষ হয়ে যায়। একারণে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরমধ্যেও শত কোটি টাকা লুটের নীলনকশা করে তারেক রহমানের হাওয়া ভবন সিন্ডিকেট। বাজার দরের চাইতে অতিরিক্ত দামে জিয়া পরিবারের পছন্দের ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি-জামায়াত সরকার।

শুধু তাই নয়, ২০০৫ সালের ২ অক্টোবর ও ৩ অক্টোবরের পত্রিকার খবরে জানা যায়- বিএনপি-জামায়াত সরকারের টানা কয়েক বছরজুড়ে লুটপাটের কারণে দেশে চরম মূল্যস্ফীতি হয়, একারণে স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষ ক্রয়ক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে। কিন্তু তারপরেও লুটপাট থামেনি বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের। আকালে নিমজ্জিত অসহায় মানুষদের জন্য বরাদ্দ ওএমএস-এর চাল-ডাল পর্যন্ত লুটে নেয় তারা। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ডিলার হওয়া ব্যক্তিরা সরকারি গুদাম থেকে স্বল্পমূল্যে চাল তুলে তার কিছুটা নেতাকর্মীদের কাছে বিক্রি করেন এবং বাকিগুলো কালোবাজারে বেচে দেন। ফলে সাধারণ মানুষ ওএমএস-এর কোনো সুবিধাই পায়নি।

কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার প্রশাসন এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রকৃত অসহায় ব্যক্তিদের জন্য ওএমএস-এর কার্ড বিতরণ করেছে। ফলে সারা বছর তো বটেই, এমনকি করোনার মতো মহামারিতেও স্বল্প আয়ের মানুষদের ঘরে স্বল্পমূল্যে সুশৃঙ্খলভাবে খাদ্য-দ্রব্য পৌঁছে গেছে। এছাড়াও প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের তালিকা অনুসারে টিসিবির মাধ্যমেও উপযৃক্ত মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় চাল-ডাল-তেল সরবরাহ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। সরকারি পণ্য স্বল্পমূল্য বিতরণের শৃঙ্খলা ফিরে আসায় অন্তত ৩ কোটি মানুষ সরাসরি উপকবৃত হচ্ছে। বৈশ্বিক মন্দা, যুদ্ধ ও মহামারির কারণে দ্রব্যমূল্যের দাম কিছুটা ঊধ্বগতি হলেও, স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষদের খাদ্য নিয়ে কোনো অনিরাপত্তা তৈরি হয়নি দেশে। আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনা করলে, ভবিষ্যতেও অসহায় মানুষদের হক আর কেউ যাতে মেরে খেতে না পারে সেজন্য কঠোর নিয়মের মাধ্যমে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

হাওয়া ভবনের বাজার সিন্ডিকেট: চাল-তেল-পেঁয়াজ কিনতেই ১৩ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় মানুষের

২০০৬ সালের ২৯ এপ্রিলের সংবাদ জানায়, হাওয়া ভবন সিন্ডিকেটের খপ্পড়ে পড়ে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত পাঁচ বছরে শুধু আটা-চাল-পেঁয়াজ ও তেল কিনতেই মানুষের অতিরিক্ত ব্যয় হয় ১৩ হাজার কোটি টাকা। সাধারণ মানুষের পকেট কেটে মূল্যসন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমান এসব অর্থ বিদেশে পাচার করে।

দেশে ভোক্তা সংরক্ষণ আইন থাকলেও খালেদা জিয়া সরকারের রাঘব-বোয়ালরা এই মূল্য সন্ত্রাস করায় কতাদের বিরুদ্ধে কিছু করা সম্ভব হয়নি। দেশে মঙ্গা, আকাল, দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং প্রায় ৩ কোটি মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটালেও সরকার তাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উচ্চ দ্রব্যমূল্যের কারণে খাদ্যাভাবে চরাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে অনেকের মৃত্যু ঘটলেও তাতে গা করেননি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। দেশের মানুষের জীবন রক্ষা নয় বরং লুটপাটের হোতা পুত্র তারেক রহমানকে সুযোগ করে দেওয়াকেই প্রধান্য দিয়েছেন তিনি।

জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠ মূল্যসন্ত্রাসীরা ৫ বছরে অতিরিক্ত ৩ লাখ কোটি টাকা লুট করে নিত্যপণ্যের বাজার থেকে

২০০৬ সালের ১ মে তারিখের জনকণ্ঠে দেখা যায়, বিএনপি-জামায়াত সরকারের ৫ বছরে অপশাসনে দেশের বাজারব্যবস্থা কতো ভয়াবহভাবে ভেঙে পড়েছে। খালেদা জিয়া সরকারের অব্যবস্থাপনা এবং নেতাকর্মীদের লুটপাট ও অর্থপাচারের কারণে ভেঙে পড়ে দেশের পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা। ফলে সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায়, আকাল সৃষ্টি হয় দেশে। চাকরিজীবী এবং নির্ধারিত আয়ের মানুষেরা জীবন চালাতে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

২০০৬ সালের ২৯ মের প্রতিবেদনে দেখা যায়, জোট সরকারের শাসনামলে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ ও হাওয়া ভবনের আশীর্বাদপুষ্ট মূল্য-সন্ত্রাসীরা জনগণের রক্ত শোষণ করে অতিরিক্ত ৩ লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে সাড়ে চার বছরে ২ লাখ ৮৬ হাজার ১১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের এই অপচক্র।

মোট লুটের মধ্যে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা লুট করে তারা শুধু খাদ্য খাতের মজুদদারির মাধ্যমে। বাকি ৯২ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা লুট করে খাদ্য বহির্ভূত অন্যান্য নিত্যপণ্যের খাত থেকে। হাওয়া ভবন চক্রের এই লুটের শিকার হয় দেশের ১ কোটি ৮২ হাজার পরিবার তথা ৯ কোটি ১০ লাখ মানুষ। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মী, জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ এবং তারেক রহমানের হাওয়া ভবনের সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাতারাতি শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যায়।

জোট সরকারের এই প্রভাবশালী লুটপাটকারীদের অধিক মুনাফার জোগান দিতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে সাধারণ মানুষ। নিত্যপণ্যের ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই সবকিছুর দাম দ্বিগুণের বেশি হয়। ফলে অর্থনৈতিক সঙ্কটের দুষ্টচক্রে বন্দি হয়ে যাওয়ায় পারিবারিক অশান্তি-দুর্দশা ও হতাশা বাড়ে মানুষের। আর বাজারব্যবস্থা থেকে লুটপাট করা এসব বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করায় দেশের অর্থনীতির ওপর ব্যাপক মন্দ প্রভাব পড়ে।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত