832
Published on মে 25, 2023২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকারে থাকার সময় বিএনপি নেতারা যেমন জমি-জলাশয়-মার্কেট দখলে বেপরোয়া হয়ে পড়েছিল, তেমনি দেশজুড়ে গাড়ি চুরি ও চোরাই মাল বিক্রির সিন্ডিকেটও গড়ে তুলেছিল তারা। বিএনপি সরকারের চিফ হুইপ খন্দকার দেলোয়ার হোসেন (পরবর্তীতে বিএনপি মহাসচিব)-এর বাড়ি থেকে পরিচালিত হতো চোরাই গাড়ি কেনাবেচার চক্রটি। দেলোয়ারপুত্র আখতার হামিদ পবন নিজে এই সিন্ডিকেট চালাতেন। ২০০৬ সালের ১০ জুনের জনকণ্ঠ পত্রিকায় তথ্যপ্রমাণসহ পবনের চোরাকারবারির তথ্য উঠে আসে।
মূলত, বিএনপি সরকারের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ঢাকার চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে একটি চক্র গড়ে তোলে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ ও খন্দকার দেলোয়ারের পুত্র পবন। এরপর রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে গাড়ি চুরি এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে গাড়ি তুলে নিয়ে যেতো তারা। পরবর্তীতে সেই গাড়িগুলো যন্ত্রাংশ বদল করে অর্ধেক দামে বিক্রি করতো। এভাবে কয়েক বছরেই চাঁদাবাজি, দখলদারি ও গাড়ি চুরির মাধ্যমে কোটি কোটি অবৈধ টাকার মালিক হয় পবন। রাজধানীর বংশাল এলাকার দোকানদার, কর্মজীবী সাধারণ নারী ও কলেজপড়ুয়া মেয়েরা পবনের নাম শুনলে ভয়ে আতঙ্কে শিউরে উঠতো।
২০০৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বংশালের একটি ফোনফ্যাক্সের দোকানদার সময়মতো চাঁদা না দেওয়ায় তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে আলোচনায় আসে তারেক রহমানের শিষ্য ও খন্দকার দেলোয়ারের পুত্র আখতার হামিদ পবন। এরপর পুরান ঢাকাজুড়ে সাধারণ জনতার তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে তাকে গ্রেফতার করে নিরাপদ হেফাজতে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে কয়েকদিন পর হাওয়া ভবনের নির্দেশে তাকে জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পরপরই আরো বেপেরায়া হয়ে ওঠে পবন। এরপর অস্ত্রের মুখে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের মোতালেব প্লাজা মার্কেটটি দখল নেয় সে ও তার আপন ভাই মিলে।
এমনকি বিএনপির রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে পবন গাড়ি চুরিতে এতোই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল যে, মতিঝিল থানার মাত্র ৫০ গজ দূরে থেকেও গাড়ি তুলে নিয়ে যায় সে। পরবর্তীতে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে পবনের সহযোগী জহিরুল এসব তথ্য স্বীকার করে। তবে একসাথে চোরাই গাড়িসহ ধরা খেলেও পবনকে জামিন দিয়ে শুধু জহিরুলকে আটকে রাখে পুলিশ। সে জানায়, গাড়ি ছিনতাইয়ের পর দ্রুত নাম্বার প্লেট বদল ও নকল কাগজপত্র তৈরি করে সেসব গাড়ি বিক্রি করে দেওয়া হতো। তবে মতিঝিলের গাড়িটি পবনের পছন্দ হওয়ায় তা সে কোনোরকম পরিবর্তন না করে নিজে ব্যবহার করছিল। একারণে গাড়িটি শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ।
পরবর্তীতে গোয়েন্দা পুলিশ সেই গাড়ির খোঁজে একসময় বিএনপি সরকারের চিফ হুইপের বাসা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। আরো নিশ্চিত হতে তারা রাজধানীর গাড়ি চোর চক্রের আরো কয়েকজনকে আটক করে। এসময় তারাও পবনের সহযোগী বলে তথ্য দিলে অবশেষে পবনকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয় পুলিশ। তবে গাড়ি চোরপবন ও তার লুটেরা ভাইয়ের প্রতি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিশেষ নেকনজর থাকায় তাদের শেষ পর্যন্ত আটকে রাখা যায়নি।