সংসদ নির্বাচন: বিএনপি ২০০১ সালের ইশতেহার কতটা বাস্তবায়ন করেছিল?

1124

Published on জুলাই 24, 2023
  • Details Image

পল্লব রানা পারভেজ:

১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামিক রেভুলোশনের নেতা ছিলেন আয়াতউল্লাহ রুহুল্লা খোমেনি। ধর্মীয় বিপ্লবের আগে তিনি একটি ক্যাসেট বের করেছিলেন। সেই ক্যাসেটের মূলকথা ছিলো এরকম: ইরানে ইসলামি বিপ্লব সফল হলে সকল নাগরিকদের কে রুটি এবং দুধ ফ্রি তে দেওয়া হবে! সাধারণ মানুষ এরকম বিস্ময়কর কথায় বিশ্বাস করে খোমেনির ইসলামি বিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।কিন্তু ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পরে খোমেনি সেই ক্যাসেট টি ভেঙ্গে ফেলে!

১৯৭৯ সালের মতো ঠিক ২০০১ সালে অক্টোবর মাসে আয়াতউল্লাহ রুহুল্লা খোমেনির মতো বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মিথ্যা নির্বাচনী ইস্তেহার ঘোষণা করেছিলো। সেই নির্বাচনী ইস্তেহারের ১০% ও বাস্তবায়ন করা হয়নি। আয়াতউল্লাহ রুহুল্লা খোমেনি রুটি দুধের ক্যাসেট ভেঙ্গে ইরানের মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো আর বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে লোভনীয় নির্বাচনী ইস্তেহার দিয়ে বাংলার মানুষের ভাগ্যে দু:শাসন ও দুনীর্তির চ্যাম্পিয়ানের ক্যাসেট তৈরী করেছিলো। ২০০১ এর অক্টোবরের নির্বাচনের ভোটগ্রহণের প্রায় তিন সপ্তাহ আগে ঢাকায় তার দলের পক্ষে ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। যাতে ৩০টিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলেও বাস্তবিক অর্থে সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি শতকরা ৯০ শতাংশও। বিএনপি নির্বাচনী ইস্তেহার কেমন ছিল এবং নির্বাচনী ইস্তেহার যে শুধুমাত্র নামমাত্র ছিলো তা বর্তমানে আমরা খুব ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারছি।

০১/ বিএনপির নির্বাচনী ইস্তেহার ছিলো সংসদের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৫০০ করা এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা বাড়ানো। কিন্তু ৫০০ আসনের সংসদ হয়নি। 

০২/ প্রবাসী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ও তৈরি পোশাক শিল্প মন্ত্রণালয় গঠন কিন্তু তা গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছিলো বিএনপি।

 ০৩/ স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন কমিশন প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো কিন্তু অবকাঠামোগত সমস্যার সমাধান করেনি। নামমাত্র দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করে বিএনপি নেতাকর্মীরা নিজেরাই সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। তারেক রহমানের হাওয়া ভবন দুর্নীতির আঁকড়া হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৫ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক প্রকাশিত তালিকায় পৃথিবীর তৎকালীন সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে স্থান লাভ করে বাংলাদেশ। বিএনপির নির্বাচনী ইস্তেহার অনুযায়ী নামমাত্র দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হলেও তাদের শাসনামলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হয় সারা পৃথিবীতে ।

০৪/ প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপিদের সম্পদের হিসাব দেয়ার কথা ছিলো বিএনপির নির্বাচনী ইস্তেহারে, কিন্তু কোনো হিসাব নেওয়া হয়নি। 

০৫/ বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ হয়নি।

০৬/ রাষ্ট্রায়ত্ত রেডিও টিভির স্বায়ত্বশাসন হয়নি।

০৭/ স্থায়ী পে-কমিশন হয়নি।

০৮/ গঙ্গার পানি চুক্তি পরিবর্তন হয়নি।

০৯/ পার্বত্য চুক্তির নতুন সমাধান হয়নি।

১০/ জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও গ্রাম সরকার গ্রাম সরকার হয়েছিলো নামমাত্র।

১১/ ইন্টারনেট ভিলেজ হয়নি।

১২/ সবার জন্য বিদ্যুৎ হয়নি, দেশে বিদ্যুৎতের জন্য হাহাকার তৈরি হয়েছিলো, লোডশেডিং অতিষ্ঠ হয়েছিলো জনজীবন।

১৩/ সব বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণ হয়নি।

১৪/ কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যয় যথাসম্ভব হ্রাস করে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ও দ্রুত কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কৃষি খাতের আধুনিকায়ন ও উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন নতুন প্রযুক্তি, গবেষণা ও গবেষণালব্ধ ফলাফলকে মাঠে প্রয়োগের ব্যবস্থা নিতে পারেনি বিএনপি ।

১৫/ সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি গ্রামীণ অঞ্চলে কর্মসংস্থানের দিকে অধিক জোর দেয়ার বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিএনপি।

১৬/ বিএনপি ও চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি হয়, দেশে চুরি,খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি ছিনতাই, চাঁদাবাজি বেড়ে যায়।

১৭/ নারীদের ক্ষমতায়ন ও মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যবসায়ে আগ্রহী ও আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মে নিয়োজিত নারীদের জন্য সহজ শর্তে ও কম সুদে ঋণ প্রদান করা এবং চাকরিতে নারীদের নিয়োগ ও পদোন্নতিতে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়টি বাস্তবায়িত করতে পারেনি বিএনপি।

১৮/ পরিবেশ রক্ষায় বিএনপি ও চারদলীয় জোট সরকার তাদের শাসনামলে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার এবং দুই স্ট্রোক বেবিট্যাক্সি নিষিদ্ধকরণ, সারা দেশে বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সফল করতে পারে নি।

১৯/ যুদ্ধাহত ও দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধা, দরিদ্র ও নিঃস্ব নারী-পুরুষ-শিশু এবং অসহায় প্রবীণ নাগরিকদের জন্য পর্যায়ক্রমে একটি কার্যকর সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলার কাজ শুরু করতেই পারেনি বিএনপি।

২০/ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গভীরতর করা এবং সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের সমান অধিকার নিষ্ঠার সাথে রক্ষার নীতিতে অবিচল থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সকল অপচেষ্টা কঠোরভাবে দমনের ব্যবস্থা করা হয়নি। বরং সে সময়ে জঙ্গিবাদে দেশের সাধারণ মানুষ পর্যদুস্ত হয়ে পড়ে। জঙ্গিদের দিয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাসহ তার দলের নেতা কর্মীদের উপর গ্রেনেড হামলা করা হয়। এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পুত্র তারেক রহমান।

২১/ অনগ্রসর পাহাড়ি ও আদিবাসী জনগণের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষা, চাকুরী ও শিক্ষা ক্ষেত্রে সকল সুবিধা সম্প্রসারণ এবং পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়ন কার্যক্রমে খুব একটা জোর দেয়া হয়নি।

২০০১ সালের নির্বাচনী ইস্তেহারের দিকে তাকালে আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারবো বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে বাংলাদেশের মানুষকে লোভনীয় নির্বাচনী ইস্তেহার দিয়েছিলো, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর তারা তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারের ১০% বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা তরুণ প্রজন্ম মনে করি, রাজনৈতিকভাবে বিএনপি আয়াতউল্লাহ রুহুল্লা খোমেনির মতো বিশ্বাসঘাতক। আয়াতউল্লাহ রুহুল্লা খোমেনির আধুনিক বিশ্বাসঘাতকতা রূপ হলো বিএনপি, যারা জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, জনগণের টাকায় নিজেদের ভাগ্য গড়ে, দুর্নীতিতে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ান করে। যুগের পরিবর্তন ঘটেছে, আমরা তরুণ প্রজন্ম কথার ফুলঝুরিতে বিশ্বাস করিনা, আমরা বিশ্বাস করি বাস্তবায়নে, আমরা বিশ্বাস করি পরিবর্তনে।

লেখকঃ কর্মসংস্থান সম্পাদক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত