নির্বাচনী ইশতেহার ২০২৪ঃ পরিবেশ সুরক্ষায় ৯ অঙ্গীকার

637

Published on ডিসেম্বর 29, 2023
  • Details Image

‘দিন বদলের সনদ’, ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ ‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’র পর এবার ‌‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ইশতেহার দিল টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। নতুন করে সরকারে এলে দলটি জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে অঙ্গীকার করেছে।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার কিছু পর থেকে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এই ইশতেহার ঘোষণা শুরু করেন। ইশতেহারে শুধু পাঁচ বছর নয়, ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কথাও উঠে এসেছে।

ইশতেহারে বলা হয়, গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২১ অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি দেশের মধ্যে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করা ও খাপ খাইয়ে চলা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ভৌত-প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন, নগরায়ণ, আধুনিকায়ন এবং জনসংখ্যা-উৎপাদন-ভোগ বৃদ্ধির পরিবেশগত অভিঘাত সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা করা আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই দুই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিগত সময়কালে আওয়ামী লীগ সরকার যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে এবং আগামী দিনেও এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

উন্নয়ন ও অগ্রগতি

২০২৩ সালের সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৮) জলবায়ু বিষয়ক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্বের কণ্ঠস্বর হিসেবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের পক্ষে বিশ্বব্যাপী অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করা হয়। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা সমর্থিত গ্লোবাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট মোবিলিটি (জিসিসিএম) তাকে এ পুরস্কারে ভূষিত করে।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড অ্যাকশন প্লান (বিসিসিএসএপি) তৈরি করা হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে। এ ফান্ডের অর্থায়নে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

২০১৮ সালে সরকার অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ‘জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করে। এই পরিকল্পনায় ১৪টি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ ও ১১টি ‘জলবায়ু সংকটাপন্ন এলাকা’ চিহ্নিত করে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।

১০টি প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেগুলোর মধ্যে ৫টি প্রকল্প সম্পূর্ণ বাতিল এবং বাকি ৫টি কয়লার পরিবর্তে গ্যাসে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

২০১৫ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ‘প্যারিস চুক্তি’ স্বাক্ষর করে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যমান প্রবণতার তুলনায় উষ্ণতা বৃদ্ধিকারক গ্যাসের উদ্গিরণ শর্তহীনভাবে ৬.৭ শতাংশ এবং শর্তাধীনভাবে আরও ১৫.১ শতাংশ হ্রাসে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে জলবায়ু অর্থায়নের জন্য ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান’ গ্রহণ করা হয়েছে।

উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসের লক্ষ্যে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী সৃজন এবং বনায়নের ব্যাপক কর্মসূচির আওতায় ২০০৯-১০ থেকে ২০২১-২২ সালের মধ্যে ম্যানগ্রোভ বনসহ প্রায় দুই লাখ হেক্টর বনায়ন ব্লক এবং ২৮ হাজার ৪৫৮ কিলোমিটার সরু বাগান সৃজন করা হয়েছে।

শিল্পদূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২ হাজার ২২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপিত হয়েছে এবং প্লাস্টিক বর্জ্য হ্রাসের লক্ষ্যে সারাদেশে একবার ব্যবহৃতব্য প্লাস্টিক দ্রব্যাদি ব্যবহার কমানো এবং এগুলোর প্রাকৃতিক বিকল্প ব্যবহার বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

দেশবাসীকে বাসযোগ্য পরিবেশ উপহার দেয়ার লক্ষ্যে বায়ুদূষণ, পানিদূষণ ও শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কার্যকর কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

পাহাড় ও টিলা কর্তন এবং পুকুর ও জলাশয় ভরাট রোধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত আছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ পর্যন্ত ২৫ মিলিয়ন মানুষ সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছে। কৃষিতে ডিজেলচালিত পানির পাম্পের বিকল্প হিসেবে সৌর সেচপাম্প স্থাপন উৎসাহিত করা হচ্ছে।

রান্নার কাজ থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে ২০ লাখ উন্নত চুলা সরবরাহ করা হয়েছে।

ইশতেহারে আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার

১. জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা, দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা এবং পানিসম্পদ রক্ষায় ইতোমধ্যে সরকার যেসব নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, তার বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে।

২. জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য উৎপাদনশীল/সামাজিক বনায়ন ২০ শতাংশে উন্নীত; ঢাকা ও অন্যান্য বড় নগরে বায়ুর মান উন্নয়ন; শিল্পবর্জ্যরে শূন্য নির্গমন/নিক্ষেপণ প্রবর্ধন; আইনসংগতভাবে বিভিন্ন নগরে জলাভূমি সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষা; সমুদ্র উপকূলে ৫০০ মিটার বিস্তৃত স্থায়ী সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা কর্মসূচি বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে।

৩. পরিবেশের ওপর প্লাস্টিক পণ্যের বিরূপ প্রভাব নিয়ন্ত্রণে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব ও পচনশীল প্লাস্টিকের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে।

৪. দেশের মোট জ্বালানিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশ ২০৪১ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ অর্জনে জোরালো প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হবে।

৫. ভূ-উপরিস্থ পানির যুক্তিসংগত ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।

৬. সুন্দরবন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বন সংরক্ষণে অগ্রাধিকারসহ দেশের বনসম্পদ রক্ষা, বন সৃজন, বন্য প্রাণী, অতিথি পাখিসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।

৭. সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ ও লবণাক্ততা রোধ এবং সুন্দরবন ও অন্যান্য অববাহিকা অঞ্চলে মিঠাপানির অভাব দূর করার ব্যবস্থা বাড়ানো হবে।

৮. দেশের বিস্তীর্ণ হাওর ও ভাটি অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

৯. নেপাল ও ভারতের সঙ্গে সপ্তকোষী প্রকল্পে বাংলাদেশের ন্যায্য অংশীদারত্ব অর্জনের চেষ্টা করা হবে।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত