স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের কথা পুনর্ব্যক্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী

1000

Published on জুলাই 17, 2014
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারকে অধিকতর শক্তিশালী করতে হবে। স্থানীয় সরকার যত শক্তিশালী হবে, জনগণও তত বেশি সেবা পাবে।

তিনি বলেন, দেশটি আয়তনে ছোট হলেও এর জনসংখ্যা অনেক বেশি। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য সেবার ব্যবস্থা করা খুবই দুরূহ। কিন্তু আমাদের এই কঠিন কাজটিই করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে নজর না দেয়ার জন্য ’৭৫ পরবর্তী সামরিক শাসকদের সমালোচনা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর পরবর্তী ক্ষমতা দখলকারীরা স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালীর পদক্ষেপ নেয়ার পরিবর্তে তাদের নিজস্ব ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে ব্যস্ত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন (এলজিআরডি) ও সমবায় মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে মন্ত্রণালয়সহ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণে একথা বলেন।

এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান সিকদার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সচিব এম এ কাদের সরকার, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামিম চৌধুরী এবং মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করতে পর্যায়ক্রমে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর স্তর পুনঃবিন্যাস করে পর্যাযক্রমে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইন-শৃংখলা, অবকাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা এবং অন্যান্য উন্নয়ন পরিকল্পনা এসব সংস্থায় ন্যস্ত করা হবে।

শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, বরাদ্দ যা হোক না কেন, তা যথাযথভাবে ব্যয় হলে পল্লী উন্নয়নসহ গোটা দেশে পরিবর্তন সাধিত হতো।

পরিকল্পিত নগরায়ন ও দেশব্যাপী নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সরকার প্রত্যেক উপজেলার জন্য মাস্টার প্লান তৈরির নির্দেশ দিয়েছে।

তিনি বলেন, কৃষি জমি রক্ষা করে নগরায়ন করতে হবে। কারণ অপরিকল্পিত নগরায়নে প্রতিবছর কৃষি জমি বিনষ্ট হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রাম, ইউনিয়ন ও উপজেলা সদর দপ্তরকে সড়ক সংযোগের আওতায় আনার অঙ্গীকার রয়েছে সরকারের।

তিনি বলেন, সরকারের এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার বিভাগকে আরও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।

সরকারের এ সমস্ত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগকে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনগুলোতে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সকল উন্নয়ন পরিকল্পনা তাদের মাধ্যমে গৃহিত ও বাস্তবায়িত হচ্ছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের এক-তৃতীয়াংশ নারী। ফলে নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সরাসরি সম্পৃক্ত হতে পারছে। নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে।

তিনি বলেন,স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকার সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ করছে। সেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ বরাদ্দ যথেষ্ট নয়। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজস্ব আয় বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে সুশাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।

‘স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে ’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিগত পাঁচ বছরে ২৫ হাজার ৪৭৯ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ এবং ৩৮ হাজার ৪৪৮ কিলোমিটার সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, পাঁচ বছরে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৭৫১ মিটার সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে এবং ৬৩ হাজার ৩৮৬ মিটার সেতু ও কালভার্ট রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। সরকার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ক্রমাগত বরাদ্দ বৃদ্ধি করছে। এসব কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

স্থানীয় সরকারের অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তনি বলেন, সরকার ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনায় ওয়াসার মাধ্যমে পানি সরবরাহ করছে। পৌরসভাগুলোতে নিজস্ব উদ্যোগে তা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গ্রামাঞ্চলে প্রায় ৯৫ ভাগ জনগোষ্ঠী এবং শহর এলাকায় নিরানব্বই ভাগ জনগোষ্ঠী নিরাপদ পানি সরবরাহের আওতায় এসেছে।

২০১৬-১৭ সময়ের মধ্যে সকল জনগোষ্ঠী নিরাপদ সরবরাহের আওতায় আসবে বলে আমরা আশা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বতক্ষ জনগণের সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। বর্তমানে এক-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী নগরবাসী। এ জনগোষ্ঠীকে সেবা প্রদানের জন্য সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলো কাজ করছে। নগর অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারী বরাদ্দ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বিদ্যমান চাহিদার ক্ষেত্রে এ বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। এ কারণে সিটি কর্পোরেশনগুলোর নিজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৩ লক্ষ ৮২ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে আরও ৩ লক্ষ ৮৮ হাজার হেক্টর জমিকে সেচের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতিতে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এক লক্ষ নারীকে প্রশিক্ষণসহ ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার ক্রমাগত অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করে যাচ্ছে- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,২০০৯-১০ অর্থবছরে এ বিভাগের বাজেট ছিল ৮ হাজার ২১২ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৫ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পাঁচ বছরে বরাদ্দ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এ অর্থ সঠিকভাবে জনকল্যাণে ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে। বাস্তবায়নের প্রতিটি স্তরে মনিটরিং জোরদার করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় উন্নয়ন কর্মকান্ড- বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার গত পাঁচবছরে বরাদ্দ দ্বিগুণ করেছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এ বিভাগের বাজেট ছিল ৮ হাজার ২১২ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৫ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ অর্থ সঠিকভাবে জনকল্যাণে ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে। বাস্তবায়নের প্রতিটি স্তরে মনিটরিং জোরদার করতে হবে।

সমবায় খাতকে একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসাবে চিহ্নিত করে শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রাম সমবায় নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। গ্রামে-গঞ্জে মেহনতী মানুষের যৌথ মালিকানায় স¤পদ সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক কর্মকা- বিস্তারের প্রয়াস নিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় উদ্যোগী যুব সমাজ সমবায়ের মাধ্যমে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সফলতা লাভ করছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নারী ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের জন্য কার্যকর সমবায় ভিত্তিক সংগঠন গড়ে উঠবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।

সমবায় ব্যাংকের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করার উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সমবায়কে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। সমবায়ের নামে কেউ যাতে প্রতারণা করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আয়বর্ধনমূলক কর্মসংস্থান, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, সমবায়ভিত্তিক ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপনের জন্য সহজ শর্তে মূলধন যোগান দিচ্ছ। ক্ষুদ্র ঋণ সহ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছি। দুর্গম এলাকা, চরাঞ্চল ও দারিদ্র্যপীড়িত এলাকাগুলোতে বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এ ছাড়াও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আয়বর্ধনমূলক কর্মসংস্থান, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, সমবায়ভিত্তিক ক্ষুদ্রও কুটির শিল্প স্থাপনের জন্য সহজ শর্তে মূলধন যোগান দিচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “ক্ষুদ্রঋণ দিচ্ছি। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছি। দুর্গম এলাকা, চরাঞ্চল ও দারিদ্র্যপীড়িত এলাকাগুলোতে বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে”।

বর্তমান সরকার নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী দারিদ্র্য বিমোচন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,এ জন্য গ্রামগুলোকে সকল উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হয়েছে। ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দারিদ্র্যের হার প্রায় ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছেন। এজন্য সরকার বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এপ্রসঙ্গে তিনি দরিদ্র মানুষের আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আয়বৃদ্ধিমূলক পেশা নির্বাচন ও বিকল্প আয়ের উৎস সৃষ্টির জন্য “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেও বলেন।

তিনি বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত ১ কোটি পরিবারের প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষকে পর্যায়ক্রমে দারিদ্র্যমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

জমির স্বল্পতা, জলবায়ু পরিবর্তন এগুলোকে বাস্তবতা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তা সত্ত্বেও আমাদেরকে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। গ্রামের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্য পল্লী উন্নয়ন একাডেমিগুলোতে প্রায়োগিক গবেষণা করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অব্যাহত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের মুখে হাসি ফুটাতে হবে। তাহলেই এদেশের লাখো শহীদের রক্তের ঋণ শোধ হবে। জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সকলকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে একসাথে কাজ করার আহবান জানান তিনি।

-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত