গুনগত মান বজায় রেখে যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কৃষি মন্ত্রনালয়কে নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

508

Published on জুলাই 20, 2014
  • Details Image

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্দীপনা ও উৎসাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে। চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা ৬৭ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

গত অর্থবছরে ১ হাজার ২২২ জন কৃষি বিজ্ঞানীকে এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রণোদনা হিসেবে প্রদান করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে দেশের বিজ্ঞানী ও গবেষকরা আরও এগিয়ে আসবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রতি বছরই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয় ৮১টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। এ সকল প্রকল্পে ১ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। চলতি বাজেটে কৃষি খাতে ১২ হাজার ২৮৮ কোটি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব আবদুস সোবহান শিকদার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদ, কৃষি সচিব নাজমুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সার বিতরণ ব্যবস্থাপনার পুনর্বিন্যাস ও সংস্কার করে। প্রায় ৩৪ হাজার খুচরা সার বিক্রেতা ও ইউনিয়ন প্রতি সার ডিলার নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। যে সারের জন্য বিএনপি আমলে কৃষককে প্রাণ দিতে হয়েছিল তা কৃষকদের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা হয়। সারে ভর্তুকি বৃদ্ধির সাথে সাথে সেচ কাজে ব্যবহৃত ডিজেল ও বিদ্যুত এবং যান্ত্রিকীকরণেও ভর্তুকি প্রদান করা হয়। সার বীজ, সেচ ও কৃষি যন্ত্রপাতির মূল্য ক্রয়সীমার মধ্যে নিয়ে আসা হয়। কৃষকদের জন্য মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুযোগ করে দেয়া হয়।

কৃষি যন্ত্রপাতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষকদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে আর কৃষিকাজ করতে চায় না। তাদের এই অনীহা দূর করতে হবে। তাদেরকে বোঝাতে হবে এটা একটা উন্নত কাজ। ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার পাশাপাশি কৃষি কাজেও উৎসাহ যোগাতে হবে। তাদেরকে বলতে হবে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র কাজ।

টেকসই কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকার কৃষি গবেষণার উপর জোর দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিজ্ঞানীরা পাট ও ছত্রাকের জীবন রহস্য উন্মোচন করেছেন। লবণাক্ততা ও প্রতিকূলতা সহিষ্ণু বিভিন্ন উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। আমরা সারা দেশে প্রায় ২০০টি স্যালাইনিটি অবজারভেশন কেন্দ্র স্থাপন করেছি।

তিনি বলেন, ‘বন্যা, আইলা, সিডর, মহাসেন ঘূর্ণিঝড়সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য আমরা প্রণোদনা দিয়েছি। তাদের পুনবার্সনের ব্যবস্থা নিয়েছি। দেশের কৃষক সমাজের নিরলস পরিশ্রমে আজ আমরা খাদ্যে স্বংয়সম্পূর্ণ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ কৃষিখাতের নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কৃষিকে টেকসই করে ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে জাতীয় কৃষি নীতি’ প্রণয়ন করা হয়েছে জাতীয় কৃষি নীতির আলোকে ‘জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি ২০১৪’ এবং ‘জাতীয় ক্ষুদ্রসেচ নীতি ২০১৪’ প্রণয়নের কাজ চলছে।

প্রতিকূলতা সহনশীল ফসলের জাত আবাদের লক্ষ্যে বিএডিসি কর্তৃক পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলার চর এলাকায় প্রায় ১ হাজার ৪৫ একর জায়গার উপর একটি বৃহত্তম নতুন বীজ বর্ধন খামার স্থাপন করা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে জেগে উঠা চরাঞ্চলকে চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও এই এলাকার কৃষককে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে সবাইকে আরও এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখন সিজনাল শাকসবজি বলে কিছু নেই। সব মৌসুমেই সব শাকসবজি ফলমূল পাওয়া যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল সাড়ে সাত কোটি বাঙালির খাদ্য ও বস্ত্রের সংস্থান। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কৃষিখাতের উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেন। জাতির পিতা ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানিয়ে ‘সবুজ বিপ্লবের’ ডাক দেন। দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের আওতায় আনার পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। বিএডিসিকে পুনর্গঠন করেন। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠাসহ সকল গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জোরদার করেন। কৃষি পেশায় যাতে মেধাবী গ্রাজুয়েটগণ আকৃষ্ট হয় এ জন্য ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্র“য়ারি তিনি কৃষি গ্রাজুয়েটদের প্রথম শ্রেণীর পদমর্যাদায় উন্নীত করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান জীবনীশক্তি কৃষি। উৎপাদনশীলতা, আয় বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠির সমৃদ্ধি অর্জনে কৃষির ভূমিকা অপরিসীম। ফসল, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ এবং বনজসম্পদসহ জিডিপিতে কৃষিখাতের অবদান শতকরা ২১ভাগ। দেশের শ্রম শক্তির প্রায় অর্ধেক এ খাতে নিয়োজিত। এ খাত কৃষিভিত্তিক শিল্পের প্রধান কাঁচামাল সরবরাহ করে। বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় ভোক্তাদের চাহিদাভিত্তিক মালামালের উৎস’ও কৃষি খাত।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত