২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায় বিএনপি-জামায়াত জোট এড়াবে কিভাবে?

17891

Published on আগস্ট 17, 2018
  • Details Image

বিভুরঞ্জন সরকারঃ

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা বদলের পরিবর্তে ‘নিশ্চিহ্ন’ করার মাধ্যমে ক্ষমতা বদলের যে রাজনীতি শুরু হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা ঘটানো হয়েছিল। ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পরে এ ঘটনার প্রধান বেনিফিশিয়ারি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বিভিন্ন শক্তিগোষ্ঠী এবং দলছুট ও সুযোগ সন্ধানীদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটি। বিএনপি এখন নিজেদের গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি বলে দাবি করলেও এ দলের কোনো কোনো নেতারা প্রায়ই দেশে আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর হুমকি দিয়ে থাকেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে পেরে না উঠে ‘নিশ্চিহ্ন’ করার রাজনীতির দিকেই বিএনপির বেশি ঝোঁক লক্ষ করা যায়।

যেভাবেই হোক না কেন বিএনপি দেশের একটি অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ এখন বিএনপি। বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে দুই দলের অবস্থান বিপরীতমুখী। তবে নানা তথ্য-উপাত্ত হাজির করে এটা বলা যায় যে ‘নিশ্চিহ্ন’ করার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি এগিয়ে আছে। দুই দলের জন্ম প্রক্রিয়াতেই এমন কিছু গুণগত পার্থক্য আছে যার জন্য হত্যা-ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বিএনপির সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে আওয়ামী লীগের আরো অনেক সময় লাগবে। বিএনপির আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্নকরণ রাজনীতি একটি বড় দৃষ্টান্ত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নৃশংস গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। মূলত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্যই ওই গ্রেনেড হামলা চালানো হলেও তিনি সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান। তবে আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ কমপক্ষে ২৩ জন নেতাকর্মী নিহত হন। শেখ হাসিনাসহ অসংখ্য নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। এদের অনেকেই সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। কেউ কেউ এখনো শরীরে অসংখ্য স্পিøন্টার নিয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। ২১ আগস্টের বীভৎস হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবেই চিহ্নিত থাকবে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। দেশে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে প্রাথমিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের দায়িত্ব। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো এত বড় অপরাধ যারা করেছিল তাদের চিহ্নিত করা, গ্রেপ্তার করা এবং আইনের হাতে সোপর্দ করার জরুরি কর্তব্যটি তৎকালীন সরকার সম্পাদনে কেবল চরমভাবে ব্যর্থতারই পরিচয় দেয়নি, বরং ঘটনা প্রবাহ অন্য খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টাই চালানো হয়েছে। অপরাধীরা যাতে নিরাপদে থাকতে পারে কৌশলে সেই চেষ্টাই করা হয়েছে। নিরপরাধ নিরীহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হয়েছিল। সাধারণ মানুষের চোখে ধুলা দেয়ার জন্যই যে অপপ্রয়াস বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার নিয়েছিল তাতে আজ আর কোনো সন্দেহ নেই।

এখন এটা অনেকের কাছে পরিষ্কার হয়েছে যে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সংশ্লিষ্টতা ছিল। গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের দেয়া তথ্য থেকেই জানা যায় যে, হামলাকারীদের সঙ্গে তৎকালীন সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের যোগাযোগ ছিল। সে সময়ে ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ‘হাওয়া ভবনে’ তারেক রহমান ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের উপস্থিতিতে হামলায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু এটাও আমাদের জানা আছে যে, তখন সরকার জজ মিয়া নামের একজন ছিঁচকে অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল। সরকার তখন শৈবাল সাহা পার্থ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেও নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছিল। ২১ আগস্টের হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে এবং শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়ে সংবাদপত্রে একটি ই-মেইল বার্তা পাঠানোর সূত্র ধরে পার্থকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পার্থই ওই ই-মেইল বার্তাটি পাঠিয়েছিল তার কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া না গেলেও সম্পূর্ণ অনুমানের ওপর নির্ভর করে পার্থ সাহাকে পুলিশ ধরে নিয়ে প্রথম চারদিন অজ্ঞাতবাসে রাখে এবং পরে তিন দফা রিমান্ডে নিয়ে তার ওপর প্রচণ্ড শারীরিক-মানসিক নির্যাতন চালায়। দরিদ্র বাবা-মায়ের সন্তান পার্থ সাহা একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। অত্যন্ত কষ্ট করে উচ্চ শিক্ষা শেষে যখন চাকরি খুঁজছিলেন, তখনই তার ওপর নেমে আসে জোট সরকারের ভয়াবহ থাবা। পার্থ সাহার প্রথম অপরাধ তিনি ‘হিন্দু’ এবং দ্বিতীয় অপরাধ তিনি ভারতের মাদ্রাজে গিয়ে বিবিএ ও এমবিএ পাস করেছেন। এমন একজন মানুষ ‘র’-এর এজেন্ট না হয়ে পারেন! তার কাছ থেকে যেমন সন্দেহজনক কোনো গোপন তথ্য পাওয়া যায়নি, তেমনি মারপিট করে প্রায় পঙ্গু বানিয়েও কোনো স্বীকারোক্তি আদায় করা সম্ভব হয়নি। তা সত্ত্বেও সরকারিভাবে তাকে ‘র’-এর এজেন্ট বানিয়ে প্রচারের কোনো কমতি দেখা যায়নি। ই-মেইলে হুমকি দেয়ার জন্য অন্য কাউকে সন্দেহের তালিকায় না এনে পার্থর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো থেকেই বোঝা গিয়েছিল জোট সরকার ২১ আগস্টের ঘটনা তদন্তে কোন নাটকের মহড়া দিতে চেয়েছে।

কোনো ঘটনা ঘটলেই তার দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানো ছিল জোট সরকারের একটি বদঅভ্যাস। ২১ আগস্টের ঘটনার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়েও বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ কোনো কোনো নেতা এমন বালখিল্য মন্তব্যও করেছিলেন যে, শেখ হাসিনা নিজেই তার ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন! ২২ আগস্ট, ২০০৪ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের এক সমাবেশে সংগঠনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেছিলেন, শেখ হাসিনা এবং সাবের হোসেন চৌধুরীকে রিমান্ডে নিলেই প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হবে! এ ধরনের বালখিল্য মন্তব্যের জন্য বিএনপি নেতারা ছাত্রদল নেতাকে তিরস্কৃত তো করেনইনি উল্টো নিজেরাও ওই ধারায় গলাবাজি করেছেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বলেছিলেন, ‘উই আর লুকিং ফর শত্রুজ’। তারপর ৩০ আগস্ট, ২০০৪ বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে দলের তৎকালীন মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুঁইয়াসহ কয়েকজন মন্ত্রী ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেন। তৎকালীন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী আমানুল্লাহ আমান ওই সমাবেশে বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক তদন্ত চাচ্ছেন। আমরা সব ধরনের তদন্ত করব। খুব তাড়াতাড়িই তদন্ত রিপোর্ট দেব। ওই রিপোর্টে গ্রেনেড হামলার জন্য আব্দুস সামাদ আজাদ, মোহাম্মদ নাসিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ এবং মতিয়া চৌধুরীকে দায়ী করা হবে।’ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে বিএনপি যে কত ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা ফেদেছিল সেটা আমানুল্লাহ আমানের বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়। তদন্ত না হতেই তদন্ত রিপোর্টে কি থাকবে সেটা একজন প্রতিমন্ত্রী বলার পর ওই তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে মানুষের মনে কি ধারণা হয় সেটা বোঝার ক্ষমতাও জোট সরকারের মন্ত্রীদের ছিল না।

 বেগম জিয়া নিজেও গ্রেনেড হামলার কথা বলতে গিয়ে খুব দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পেরেছিলেন সেটাও বলা যায় না। ২ সেপ্টেম্বর, ২০০৪ বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছিলেন, সরকারের সাফল্যকে আড়াল করতে ‘বোমা’ হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বেগম জিয়ার এ বক্তব্য দেশের মানুষকে হতবাক করেছে। শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা এবং আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছিল সরকারের সাফল্যকে আড়াল করতে- এমন বক্তব্য সরকার প্রধানের মুখ থেকে বের হওয়ার পর ২১ আগস্টের ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত যে হবে না সেটা তখন সবার কাছেই স্পষ্ট হয়েছিল। বাস্তবে ঘটেছিলও তাই। জোট সরকার ক্ষমতায় থাকতে তদন্তকাজ অগ্রসর হয়নি, বরং প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার জন্য, সবকিছু ধামাচাপা দেয়ার কসরৎই চালানো হয়েছিল।

শুধু ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা নয়। ২০০১ সালে নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম তিন মাসে এমন একটি দিন ছিল না যেদিন দেশের কোথাও না কোথাও সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। শারীরিক নির্যাতন, লুণ্ঠন, ঘরবাড়িতে আগুন লাগানো, জোরপূর্বক চাঁদা আদায় এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বেশি। ভোলাসহ বিভিন্ন স্থানে নারী নির্যাতনের অসংখ্য ঘটনা ঘটেছিল। সিরাজগঞ্জে কিশোরী পূর্ণিমাকে গণধর্ষণের শিকার হতে হয়েছিল। অথচ তার বাবা-মা নির্বাচনে ধানের শীষেই ভোট দিয়েছিলেন। হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন অনেকেই। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে সংখ্যালঘু পরিবারের ১১ জন সদস্যকে পিটিয়ে মারা হয়েছিল। বর্ষীয়ান কলেজ অধ্যক্ষ গোপালকৃষ্ণ মহুরী, বৌদ্ধ ভিক্ষু জ্ঞানজ্যোতি মহাথেরো, হিন্দু পুরোহিত মদনমোহন গোস্বামীকে হত্যা করা হয়েছিল, যদিও তাদের কারোই রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ছিল না। দেশজুড়ে শত শত সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র আটক এবং দেশের বিভিন্ন জেলায় একযোগে জঙ্গিদের বোমা হামলার ঘটনা।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন বর্তমান সরকারের সমালোচনায় অত্যন্ত মুখর। তিনি এই সরকারের কোনো কিছুই ভালো দেখেন না। একজন রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে সরকারের ভুলত্রুটির সমালোচনা করার অধিকার তার আছে। কিন্তু তিনি যখন ঢালাওভাবে সরকারের সমালোচনা করেন তখন বিনীতভাবে জানতে ইচ্ছে হয়, তিনি কি আয়নায় নিজের মুখ দেখেন? তার শাসনামলে দেশ কেমন চলছিল সেসব কি তার মনে আছে? তিনি কি একবার ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের সংবাদপত্রগুলোর পাতায় চোখ বুলিয়ে দেখবেন? ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ অসংখ্য বোমা হামলার ঘটনা এবং দেশজুড়ে জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থানের ঘটনাগুলোর কথা মনে পড়লে তার তো বর্তমান সরকারের লাগামহীন সমালোচনা করার কথা নয়। রাজনীতিতে মতভিন্নতা থাকাটাই স্বাভাবিক। সব শিয়ালের এক রার মতো সব রাজনৈতিক দলের এক রা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নানা মতের, নানা পথের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করবে- এটাই গণতন্ত্রের রীতি। কিন্তু মত ও পথের ভিন্নতার জন্য সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে পরিবেশ নষ্ট হওয়াটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অথচ আমাদের দেশের রাজনীতিতে পরমতসহিষ্ণুতার অভাব অত্যন্ত প্রকটভাবেই লক্ষ করা যায়। রাজনীতিবিদদের অসহিষ্ণু মনোভাবের কারণে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ক্রমাগত বাড়ছে। বেগম জিয়া নিজের শাসনামলের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য একবারো দেশবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ না করে বর্তমান সরকার আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কিংবা আইনের শাসনের অভাব নিয়ে কথা বলেন তখন দেশের মানুষ সে বক্তব্য খুব ভালোভাবে গ্রহণ করে বলে মনে হয় না। সমালোচনা যদি বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যনির্ভর না হয় তাহলে সেটা মানুষের কাছেও বিশ্বাসযোগ্য হয় না।

বর্তমান সংসদীয় রাজনীতিতে এখন বিএনপির কোনো ভূমিকা নেই। তার মানে অবশ্য এটা নয় যে বিএনপি ভবিষ্যতেও জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না। সেই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী না করেও বিএনপির চেয়ারপারসনের কাছে দেশের মানুষ জানতে চাইতে পারে, আগামীতে তিনি তার সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে ক্ষমতায় গেলে দেশে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির চর্চা বন্ধ করবেন কি? এখনই তিনি যেভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন তা থেকে তো মনে হয় ক্ষমতায় গেলে দেশে আবার বিরোধী রাজনীতি দমনের নামে নিষ্ঠুর ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হবে। তার কাছে আরো জানার বিষয় যে, তিনি ক্ষমতায় গেলে বর্তমান সরকার যেসব বিচার কাজ শুরু করেছে সেসব অব্যাহত থাকবে কি না? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ কি চলবে? যাদের ইতোমধ্যে দণ্ড দেয়া হয়েছে তা কি কার্যকর করা হবে? ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা কিংবা দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের মামলারই বা পরিণতি কী হবে? দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছিল তার শাসনামলে। অথচ তিনি আগেও বলেছেন, এখনো বলছেন যে দেশে কোনো জঙ্গি নেই। জঙ্গিদের তিনি আড়াল করতে চান কেন সেটা একটি রহস্য বৈকি! আবার ক্ষমতায় গেলে জঙ্গিদের প্রশ্রয় দেবেন কিনা সেটা তার স্পষ্ট করে বলা দরকার।

বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকতে দেশে বোমাবাজি-সন্ত্রাস-সহিংসতাসহ যত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটেছে তার কোনোটার দায়ই তারা এড়াতে পারবে না। অতীত পাপের কাফফারা না দিয়ে বিএনপির পক্ষে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব হবে কি?

সৌজন্যেঃ ভোরের কাগজ 

প্রকাশঃ 

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত