বঙ্গবন্ধু দ্য সেঞ্চুরিয়ান

3308

Published on মার্চ 17, 2020
  • Details Image

আজ বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বয়স হতো ১০০!

ক্রিকেট, ফুটবল, হকিতে কত শত সেঞ্চুরির গল্প ও মহাকাব্য ছাপা হয় খেলার পাতায়। একজন বঙ্গবন্ধু শত বছরে নয়, হাজার বছরে একজন আসেন। আমাদের সৌভাগ্য, বঙ্গবন্ধু এই বাংলার মাটিতে জন্ম নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন বলেই আজ বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র একটি মূল্যবান পতাকা পেয়েছে। আর এই পতাকা নিয়ে তামিম-জামাল-জিমি-সানা-মাবিয়া-মারিয়ারা গৌরবের সঙ্গে বিশ্বে বড় ক্রীড়াযজ্ঞে যান প্রতিদ¦ন্দ্বিতা করতে। আজ স্বাধীনতা যুদ্ধের মহানায়কের শততম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন, হে স্বপ্নদ্রষ্টা!

বঙ্গবন্ধু নিজেও খেলতেন। এ ছাড়া বড় ভক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান পেশাগত জীবনে সেরেস্তাদার হলেও খেলাধুলার প্রতি তার ছিল বিশেষ অনুরাগ। তিনি গোপালগঞ্জ অফিসার্স ক্লাবের ফুটবল টিমের অধিনায়কও ছিলেন। ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে তিনি ক্লাবটির সেক্রেটারির দায়িত্বও পালন করেন। ফুটবল খেলাতে শেখ লুৎফর রহমান বিশেষ সুনাম কুড়িয়েছিলেন।

‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন-‘আমার আব্বাও ভালো খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি অফিসার্স ক্লাবের সেক্রেটারি ছিলেন। আর আমি মিশন স্কুলের ক্যাপ্টেন ছিলাম। আব্বার টিম ও আমার টিমের যখন খেলা হতো তখন জনসাধারণ খুব উপভোগ করত। আমাদের স্কুল টিম খুব ভালো ছিল। মহকুমায় যারা ভালো খেলোয়াড় ছিল, তাদের এনে ভর্তি করতাম এবং বেতন ফ্রি করে দিতাম।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘অফিসার্স ক্লাবের টাকার অভাব ছিল না। খেলোয়াড়দের বাইরে থেকে আনত। সবাই নামকরা খেলোয়াড়। বৎসরের শেষ খেলায় আব্বার টিমের সাথে আমার টিমের পাঁচ দিন ড্র হয়। আমরা তো ছাত্র; এগারোজনই রোজ খেলতাম, আর অফিসার্স ক্লাব নতুন নতুন প্লেয়ার আনত।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ক্রীড়ানুরাগী ও ক্রীড়াবিদ। রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধুর সামনে খেলোয়াড় শেখ মুজিবুর রহমানের ক্যারিয়ার হয়তো খুব দীর্ঘ নয়। তবে ক্রীড়াঙ্গন নিয়েই যাদের চিন্তা-চেতনা তাদের কাছে ক্রীড়া সংগঠক শেখ মুজিবুর রহমানের মূল্য অমøান। হয়তো সে কারণেই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠিত হয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা আজও চিরভাস্বর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আত্মজীবনীতেই বলেছেন, ‘ছোট সময়ে আমি খুব দুষ্টু প্রকৃতির ছিলাম। খেলাধুলা করতাম, গান গাইতাম এবং খুব ভালো ব্রতচারী করতে পারতাম।’ শৈশব-কৈশোরে তার খেলাধুলার প্রকৃতি সম্পর্কে তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘ফুটবল, ভলিবল ও হকি খেলতাম।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্কুলজীবন থেকেই সক্রিয়ভাবে খেলাধুলায় অংশ নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু ভলিবল, বাস্কেটবল ও হকিও খেলতেন। তিনি স্কুল ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন। তার উদ্যোগেই ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জে মিশন স্কুলে গড়ে উঠেছিল ফুটবল ও ভলিবল দল। স্কুলজীবনে বঙ্গবন্ধুর বিরামহীন ক্রীড়াচর্চা ক্রমান্বয়ে তাকে পরিপক্বতার দিকে নিয়ে যায়। এক সময় তিনি প্রাদেশিক পর্যায়ের ফুটবল দলেও জায়গা করে নেন। ১৯৪০ সালের শুরুতে তিনি রাজধানী ঢাকায় ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন।

নিয়মিত খেলার সুযোগ না থাকলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪১ থেকে আমৃত্যু ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সঙ্গে নানাভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৪৩-৪৪ মৌসুমে বগুড়ায় একটি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়েছিল। এ টুর্নামেন্টে তার নেতৃত্বে ওয়ান্ডারার্স ক্লাব অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে বাস্কেটবলও খেলেছেন। রাজনীতির কারণে মাঠকে একটু দূরে ঠেলে দিলেও ক্লাবের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকালেও কখনো কখনো তিনি প্রাণের টানে চলে যেতেন ক্লাব প্রাঙ্গণে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সরকার আমলেই ক্রীড়াঙ্গনকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তিনি ক্রীড়াঙ্গনের কিশোর-যুবকদের সম্পৃক্ত করার তাগিদ অনুভব থেকেই যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমকে নিজ থেকে খতিয়ে দেখতেন। ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে (তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে) একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ফুটবল প্রতিযোগিতা মাঠে গড়ায়। স্বাধীনতা-উত্তর ক্রীড়াঙ্গনের এ অভিযাত্রার প্রথম ম্যাচটি উদ্বোধন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিতে তিনি ১৯৭২ সালে গঠন করেন ‘ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা’। ওই সময়ে এ সংস্থাটি শিক্ষা-সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে অধীনে পরিচালিত হতো। পরে ক্রীড়াঙ্গনের আইনগত ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে ১৯৭৪ সালে জাতীয় সংসদে পাস হয় বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল অ্যাক্ট। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার তার পরিকল্পনা থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আজকের বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)। এক কথায় রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই ক্রীড়াঙ্গনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

সৌজন্যেঃ দৈনিক আমাদের সময়

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত