বঙ্গবন্ধু বিশ্বের মুক্তিকামী সকল মানুষের রাজনৈতিক আদর্শ

1931

Published on আগস্ট 18, 2020
  • Details Image

খাজা খায়ের সুজনঃ

‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা- অক্ষয় ভালোবাসা- যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে’ [বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩০ মে, ১৯৭৩]। বঙ্গবন্ধু শুধুমাত্র বাংলা ও বাঙ্গালীদের নিয়ে ভাবতেন না। তার সারা জীবনের সংগ্রাম ও ত্যাগের মাধ্যমে এটাই আজ প্রমাণিত তিনি ছিলেন সারা বিশ্বের মুক্তিকামী সকল ধর্ম, বর্ণ গোত্রের রাজনৈতিক আদর্শ ও অনুপ্রেরণার নাম। সারা বিশ্বের যেখানে মানুষ শোষিত ও বঞ্চিত হয়েছে সেখানকার মানুষের হয়ে তাদের একজন হয়ে কথা বলেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

‘দুনিয়ার যেখানেই মজলুম মানুষ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে, আমরা নিশ্চয়ই তার পাশে গিয়ে দাঁড়াব।’ [৯ এপ্রিল ১৯৭২, আওয়ামী লীগের কাউনসিলে দেওয়া বক্তৃতা]। মননে মগজে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সারা দুনিয়ার শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের নেতা। দুনিয়ার যেখানেই মানুষের উপর অত্যাচার ও নিপীড়ন হয়েছে সেখানেই পৌঁছে গেছে বঙ্গবন্ধুর হুঙ্কার । তাদেরকে সাহস দিয়েছেন, পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। শোষকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন বঙ্গবন্ধু। তৎকালীন বিশ্ব রাজনীতিতে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ছিল অত্যন্ত সুস্পষ্ট।

‘আমরা তাকাব এমন এক পৃথিবীর দিকে, যেখানে বিজ্ঞান ও কারিগরি জ্ঞানের বিস্ময়কর অগ্রগতির যুগে মানুষের সৃষ্টিক্ষমতা ও বিরাট সাফল্য আমাদের জন্য এক শঙ্কামুক্ত উন্নত ভবিষ্যৎ গঠনে সক্ষম।’ [২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪, জাতিসংঘে প্রদত্ত ভাষণ]। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বাস করতেন মানুষের সৃষ্টিশীলতায়, কর্মে ও যোগ্যতায়। তিনি বিশ্বাস করতেন সকল মানুষের অন্তর্নিহিত ক্ষমতায়। মানুষ সুযোগ পেলে যেকোনো কাজ করতে সক্ষম এটি ছিল বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস। তিনি চেয়েছিলেন সারা বিশ্বের মানুষের মুক্তি। তখনই বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন মানুষকে কারিগরি ও বিজ্ঞান শিক্ষায় শক্তিশালী উন্নত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশে দেশে যখন ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামো ভেঙে পড়ছিল, আফ্রিকা, এশিয়া আর লাতিন আমেরিকায় যখন ছড়িয়ে পড়ছিল স্বাধীনতার সংগ্রাম, বিশ্ব যখন স্নায়ুযুদ্ধে আক্রান্ত হয়ে পড়ছিল ঠিক সেই সময়টাতেই শুরু হয়েছিল নতুন এক আন্দোলন। যার নাম 'ন্যাম' বা নন এল্যাইন্ড মুভমেন্ট। বাংলায় যাকে বলা হয় জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন। এই জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল অনন্য। এছাড়াও সদ্য স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতে ভূমিকা রাখে এই সফর।

১৯৭৩ সালের ৫ থেকে ৯ই সেপ্টেম্বর আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত হয় জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন- ন্যামের চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন। এতে প্রথমবারের মত যোগ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সদ্য স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের অবস্থান সৃদৃঢ় করতে ভূমিকা রাখে এই সফর। সম্মেলনে সৌদি বাদশাহ ফয়সাল, যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো, কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ত্রো, মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত, লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফিসহ অন্যান্য বিশ্বনেতারাও অংশ নেন। সম্মেলনে মোট দু'দফা বক্তব্য রাখেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৮ই সেপ্টেম্বর স্বাগত ভাষণে সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, বর্ণবাদ বিরোধী মজলুম জনগণের ন্যায্য সংগ্রামের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন জানাতে জোট নিরপেক্ষনীতি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’

বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেন, ‘আমি শুরুতেই জাতীয়তাবাদী মুক্তি আন্দোলনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের যেসব গণমানুষ শহীদ হয়েছে তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম আজও অব্যাহত ভিয়েতনাম, এঙ্গোলা, মোজাম্বিক, নামিবিয়া, গিনি বিসাওসহ ল্যাটিন আমেরিকা ও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। তাই একটি বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়তে আমাদের সবাইকে এক হয়ে শোষিতের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।’ পরদিন ৯ই সেপ্টেম্বর বিদায়ী ভাষণেও বঙ্গবন্ধু বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘উপমহাদেশকে শান্তিপূর্ণ রাখতে হলে, যেকোনো সমস্যার মানবিক সমাধান খুঁজতে হবে। একটি সমৃদ্ধ বিশ্বের জন্য আমাদের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ওপর জোর দিতে হবে। আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই এখানে এক হওয়ার জন্য। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সদস্য দেশগুলোর পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার প্রত্যয় দেশগুলোর সামাজিক সমৃদ্ধি আনতে পারে।’

১৯৭৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে আয়োজিত ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সম্মেলনে সমকালীন মুসলিম বিশ্বের সমস্যা এবং সম্ভাবনা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু এক যুগান্তকারী বক্তব্য দেন। ফিলিস্তিনসহ নির্যাতিত মুসলমানদের অধিকার নিয়ে এ ভাষণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় আজকের আধুনিক মুসলিম নেতারা ইসলামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ফিরিয়ে আনার জন্য যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন বা চিন্তা করছেন, বঙ্গবন্ধু আরও আগেই এসব কথা বলে গেছেন। এ থেকে একটি বিষয় অত্যন্ত পরিষ্কারভাবেই ফুটে ওঠে যে, বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের মুসলমানদের উন্নয়নের কথাই ভাবতেন না, বরং বিশ্ব মুসলমানের ঐক্য এবং ইসলামকে বিজয়ী শক্তি হিসেবে দেখার স্বপ্নও বুকে লালন করতেন। এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বলেন- ধ্বংস নয় সৃষ্টি, যুদ্ধ নয় শান্তি, দুর্ভোগ নয়, মানুষের কল্যাণে আমাদের কাজ করতে হবে। যা ছিল বিশ্বর শান্তিকামী মানুষের জন্য অমরবাণী।

১৯৭৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সর্বসম্মত অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। এর কয়েক দিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৯তম অধিবেশনে প্রথমবারের মতো বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই ভাষণটি ছিল সমগ্র বিশ্বের অধিকারহারা শোষিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ভাষণ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার একটি বলিষ্ঠ উচ্চারণ ও সাহসী পদক্ষেপ।

জাতিসংঘের এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, বিশ্বের বহু অংশে এখনো অবিচার ও নিপীড়ন চলিতেছে। অবৈধ দখলকৃত ভূখণ্ড পুরোপুরি মুক্ত করার জন্য আমাদের আরব ভাইদের সংগ্রাম অব্যাহত রহিয়াছে এবং প্যালেস্টাইনি জনগণের বৈধ জাতীয় অধিকার এখনো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয় নাই। উপনিবেশ বিলোপ প্রক্রিয়ার যদিও অগ্রগতি হইয়াছে কিন্তু এই প্রক্রিয়া এখনো চূড়ান্ত লক্ষ্যে পোঁছায় নাই, বিশেষ করিয়া আফ্রিকার ক্ষেত্রে এই সত্যটি স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। এই অঞ্চলের জিম্বাবুয়ে এবং (দক্ষিণ রোডেশিয়া) নামিবিয়ার জনগণ জাতীয় মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য দৃঢ়তার সাথে লড়াই করিয়া যাইতেছে। বর্ণবৈষম্যবাদ, যাহোক মানবতার বিরোধী বলিয়া বার বার আখ্যায়িত করা হইয়াছে তাহা এখানে আমাদের বিবেককে দংশন করা অব্যাহত রাখিয়াছে।

এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিশ্বের জাতিসমূহ ঐক্যবদ্ধভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করিতে না পারিলে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা আরও চরমে উঠিবে, ইতিহাসে ইহার প্রমাণ পাওয়া যায়। মানুষের সেই দুঃখ-দুর্দশার আর কোন পূর্ববর্তী নজির পাওয়া যাইবে না। ইহার পাশাপাশি অবশ্য থাকিবে গুটিকয়েক লোকের অপ্রত্যাশিত সুখ-সমৃদ্ধি। শুধুমাত্র মানবিক সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়িয়া তোলা এবং এই মহাবিপর্যয় পরিহার করিবার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক।‘

বিশ্বে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর সাহসী উচ্চারণ ছিল অত্যন্ত সুস্পষ্ট। বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন অনড়। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে, সমবেত উন্নয়নশীল দেশসমূহ শান্তির স্বার্থকে দৃঢ় সমর্থন করে। জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষা এবং শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিশ্বের বিপুল সংখ্যাগুরু জনগণের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কথা তাহারা প্রকাশ করিয়াছেন। মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষা জন্য শান্তি অত্যন্ত জরুরি এবং তাহা সমগ্র বিশ্বের নর-নারীর গভীর আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন ঘটাইবে। এবং ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত শান্তিই দীর্ঘস্থায়ী হইতে পারে।

মাতৃভাষায় বঙ্গবন্ধু মুজিবের এই ঐতিহাসিক বক্তৃতার পর অধিবেশনে সমাগত পাঁচটি মহাদেশের প্রতিনিধি এবং সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহুল পঠিত জাতিসংঘের 'ডেলিগেট বুলেটিন' বঙ্গবন্ধুকে 'কিংবদন্তির নায়ক মুজিব' বলে আখ্যায়িত করে। বুলেটিনটিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়কদের প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিক্রিয়া পত্রস্থ করা হয়। বুলেটিনের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল, 'এ যাবত আমরা কিংবদন্তির নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের নাম শুনেছি। এখন আমরা তাকে কাজের মধ্যে দেখতে পাব।' জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্পর্কে বলা হয়, 'বক্তৃতায় ধ্বনিত হয়েছে মুজিবের মহৎকণ্ঠ।' জাতিসংঘের মহাসচিব ড. কুর্ট ওয়াল্ডহেইম তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, 'বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় আমি আনন্দিত ও গর্বিত। বক্তৃতাটি ছিল সহজ, গঠনমূলক এবং অর্থবহ।' ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস কালাহান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব তাকে মুগ্ধ করেছে। বাস্তবিকই তিনি এক শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব।'

১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ, যেখানে তিনি স্পষ্ট করে বলেছিলেন-‘বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত, এক পক্ষে শোষক, আরেক পক্ষে শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’ জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে শোষিত মানুষের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর এই অবস্থান বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়। বিশ্বের শোষিত-নির্যাতিত মানুষ বঙ্গবন্ধুকে গ্রহণ করে নেয় নিজেদের নেতা হিসেবে।

বঙ্গবন্ধুকে বর্ণনা করতে গেলে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর উক্তি সবার আগে মনে পড়বে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, তার সিদ্ধান্ত, অবিচলতা নিয়ে বলতে গিয়ে ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় তিনি হিমালয়ের মতো।’

ইতিহাসের মহামানব, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদতাবার্ষিকীতে সেদিনের সেই কালরাতে জাতির পিতার পরিবারের সদস্যসহ যারা ঘাতকের নির্মম বুলেটে প্রাণ হারিয়েছিলেন তাদের সকলকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করি। শোকের মাস আগস্টের ১৫ তারিখে দুনিয়ার নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু জাতির জনককে আমরা হারিয়েছি, যার জন্ম না হলে এই দেশ স্বাধীন হতো না এবং আজও আমরা পাকিস্তানের দাসত্বের নিগড়ে আবদ্ধ থাকতাম। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে ‘আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ যে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত ও সমার্থক তা আজ সকলের কাছে সুস্পষ্ট।

শোষণ ও দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে দেশে দেশের বাইরে দোয়েলের মতো কোয়েলের মতো উড়ে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। জাতির পিতা যে! সন্তানদের ভাল রাখতে হবে। ভাল রাখার সব চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। বিনিময়ে ১৮টি বুলেট। আর যদি একটা গুলি চলে...। বঙ্গবন্ধুর হুংকারে পাকিস্তানি শোষকদের ভীত কেঁপে উঠেছিল। মুজিবের বুকে বন্দুক তাক করার সাহস তারা পায়নি। অথচ সে বুকটাই কি না বুলেটে ঝাঁঝরা করে দিল নিজ দেশের সেনাবাহিনীর কয়েক বর্বর। প্রশস্ত বুক টানটান সিনার ভেতরে যত্নে রাখা বাংলাদেশটাও রক্তাক্ত করল এরা।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী আমাদের জন্য এক অনন্য প্রাপ্তি। তিনি এমন একজন মহান নেতা যিনি বাঙালিকে দিয়েছেন একটি স্বাধীন দেশ, পতাকা এবং মানচিত্র। একটি সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।‘ সে জন্যই তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী। যতই দিন যাচ্ছে বাঙালীর কাছে, বাংলাদেশের কাছে, বিশ্বের কাছে বঙ্গবন্ধুর অপরিহার্যতা আরও বাড়ছে। শতবর্ষে আরও উজ্জ্বল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু।

লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা।

সৌজন্যেঃ www.sarabangla.net 

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত