বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথে, দৃঢ়সংকল্পে.....

2996

Published on সেপ্টেম্বর 7, 2020
  • Details Image

অজয় দাশগুপ্ত:

এখন আমাদের সামনে কাজ কী? এক, দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে, উৎপাদন বাড়াতে হবে। ... পপুলেশন প্লানিং করতে হবে।... আপনারা নিঃস্বার্থভাবে স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিলেন, সেই সংগ্রাম যদি আপনারা না করেন ন্যায়-অবিচার-দুর্নীতির বিরুদ্ধে, গঠনমূলক কাজে, দেশ গড়ার কাজে, উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে, তাহলে খুবই ক্ষতি হয়ে যাবে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে এ বক্তব্য রেখেছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার পর। তিনি বলেছিলেন, আমার তো ক্ষমতা কম ছিল না। তবু আজকে আমূল পরিবর্তন করেছি শাসনতন্ত্রে। কারণ সুষ্ঠু শাসন কায়েম করতে হবে। যেখানে মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে। যেখানে মানুষ অত্যাচার থেকে বাঁচতে পারে। চেষ্টা নতুন, আজ আমি বলতে চাই। এটা আমাদের দ্বিতীয় বিপ্লব। এর অর্থ দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো।

বঙ্গবন্ধু এর পর সাত মাসের মতো সময় পেয়েছিলেন। তিনি ২৪ ফেব্রুয়ারি একক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠনের ডিক্রি জারি করেন। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের বিশাল জনসমাবেশে বলেন, জাতীয় ঐক্য গড়ার জন্য একদল করা হয়েছে। যারা বাংলাদেশকে ভালবাসে, চারটি রাষ্টীয় আদর্শ মানে, সৎপথে চলে তারা সকলেই এ দলের সদস্য হতে পারবেন। ৭ জুন গঠিত হয় বাকশাল ও তার পাঁচটি অঙ্গ সংগঠন- জাতীয় কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, জাতীয় মহিলা লীগ, জাতীয় যুবলীগ ও জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। এর ধারাবাহিকতায় ৬১ জেলা গভর্নর ও জেলা বাকশাল সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করা হয়। ১৯ জুন বাকশাল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের সভায় দলের চেয়ারম্যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন আজ আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি, আমার বহু সহকর্মী, যাদের সাথে আমি দুর্দিনে কাজ করেছি, বিপদের দিনে কাজ করেছি, মাঝখানে এদিক-ওদিক ছুটে গিয়েছিলেন ডিফারেন্স অব অপিনিয়নের জন্য, তারা আজকে এখানে এসেছেন। আজকে আবার আমরা এক হয়েছি। সরকারি কর্মচারীরা এক হয়েছি। আজ সকলে মিলে যার যা কর্তব্য আছে করুন।

২১ জুলাই নবনিযুক্ত জেলা গভর্নরদের সভায় বলেন, যারা গভর্নর হবেন দুই-তিন সপ্তাহ প্রশিক্ষণ হবে, নানা বিষয় শিখতে হবে। আমাদের কোন জন ধান-আম-পাট বেঁচে, মরিচ-পেঁয়াজ বেঁচে লেখাপড়া শেখেননি? খালে ডুবে গোসল করেছি আমরা। নদী সাঁতরে পার হয়েছি। কত কি গ্রামে করেছি। কী জানেন না আপনারা?

এভাবে জাতির পিতা বাংলাদেশের সমাজে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিতদের শেকড়ের সন্ধান করার তাগিদ দিয়েছিলেন। প্রত্যাশা স্পষ্ট, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষক-দিনমজুর-কারখানার শ্রমিক ও নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করতে হবে। তিনি জানতেন, এ জন্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর উৎপাদন বাড়লে মিলবে কাজ, যা থেকে মিলবে নিয়মিত উপার্জন। অনেক অনেক লোক সেই উপার্জনের টাকা নিয়ে বাজারে গেলে সৃষ্টি হবে পণ্যের চাহিদা। সেই চাহিদা পূরণ করতে পারে উদ্যোক্তা শ্রেণি, যারা দাবি করবে সুদক্ষ শ্রমশক্তি বা মানবসম্পদ। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরপরই শিক্ষার প্রসার ও উন্নয়নে মনোযোগী হয়েছিলেন সেটা আকস্মিক ছিল না। আর তারই ধারাবাহিকতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সময়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঁচ কোটির বেশি শিক্ষার্থীর সগৌরব উপস্থিতি, যার প্রায় অর্ধেক নারী। বেগম রোকেয়া শেখ হাসিনার মাথায় দূর লোক থেকে আশীর্বাদের হাত রেখে বলতেই পারেন, এমনটিই তো চেয়েছিলাম।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনের কর্মসূচি ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং জাতীয় ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এ কর্মসূচি আয়োজনে মুখ্য ভূমিকায় থাকলেও সর্ব মহলে ধারণা ছিল, যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁর আহ্বানে প্রথম জাতীয় পতাকা উড্ডীন হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২ মার্চ, সেখানে তিনি নতুন দিন প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাবেন। কিন্তু এ দিন তিনি নিষ্ঠুর হত্যকাণ্ডের শিকার হন ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাসভবনে। ড. জিল্লুর রহমান খান তাঁর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মোহনী নেতৃত্ব ও স্বাধীনতার সংগ্রাম’ গবেষণা গ্রন্থে লিখেছেন, ঘাতকদের উদ্যত আগ্নেয়াস্ত্রের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘যদি বাঙালিরা তাদের জাতির পিতাকে হত্যা করতে চায়, তিনি জীবন দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। কিন্তু এর পরিণতি বাঙালিদের জন্য শুভ হবে না। তাদের জীবন কখনোই আগের মতো হবে না এবং তাকে হত্যার করার সঙ্গে গণতন্ত্রকেও তারা হত্যা করবে, মানবিকতা বিদায় নেবে। [পৃষ্ঠা ২৬১]

প্রকৃতই এক অন্ধকার সময় নেমে এসেছিল বাংলাদেশে, যা স্থায়ী হয় টানা ২১ বছর। শঠতা, হিংস্র শ্বাপদের দাপট, প্রলোভনের ফাঁদ, এ সবই আমাদের দেখতে হয়। চাপা পড়ে যায় ন্যায়-নীতি, মহৎ আদর্শ ও মূল্যবোধ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত হয়। সামরিক ফরমানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ তো দূরের কথা, এমনকি নাম উচ্চারণও নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। এ অপশক্তি প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে সুকৌশলে। সা¤প্রদায়িকতা, কুর“চিকর প্রচারণা, মিথ্যাচার, এ সব হাতিয়ার হয়। বাকশাল গঠনকে তারা গণতন্ত্র হত্যা বলে অপপ্রচার চালাতে থাকে। উন্নত-গর্বিত বাংলাদেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা চাপা পড়ে যায়। তাঁর পরিবারের সাদামাটা জীবন যাপন আড়াল করার জন্য বানোয়াট রটনা চলতে থাকে। খোন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমান, এইচএম এরশাদ, বেগম খালেদা জিয়া, সবার এক সূর, ফ্যাশিস্ট হিটলারের কুখ্যাত প্রচাবিদ গোয়েবলসকে তারা অনুসরণ করতে থাকে, ন্যায় ও সত্য চাপা দিতে যে কোনো মিথ্যা, কুৎসা, কুর“চিকর কথা শত বার বলতে থাক, মানুষ বিভ্রান্ত হবেই।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে মোশতাক-ফারুক-রশিদ চক্রের সাথে প্রথম থেকেই সেনাবাহিনীর উপপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সক্রিয় ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ৯ দিন পর ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট তাকে সেনাবাহিনী প্রধানের পদ প্রদান করে খোন্দকার মোশতাক আহমদ। ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি ও ৭ নভেম্বর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ গ্রহণকারী বিচারপতি আবুসাদাত মোহাম্মদ সায়েম ‘বঙ্গভবনে শেষ দিনগুলি’ গ্রন্থে লিখেছেন, সেনাবাহিনী প্রধান জিয়াউর রহমান ‘একটি স্থায়ী সার্ভিসের অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন এবং সেই সঙ্গে স্থল, নৌ ও বিমান, তিন সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেকটির ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন। এ সব পদে জেনারেল ইয়াহিয়া খান বহাল ছিলেন বাংলাদেশের চূড়ান্ত মুক্তি ও বিজয়-লাভ করা পর্যন্ত। [পৃষ্ঠা ২২]

বিচারপতি সায়েম একাত্তরের গণহত্যার প্রধান হোতা জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের তুলনা করেছেন যথার্থভাবেই। মানবতাবিরোধী অপরাধীরা এক কাতারেই থাকে বৈকি।

বিচারপতি সায়েম লিখেছেন, ‘১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বর আমার দেওয়া ঘোষণায় সংবিধানের ১১৭-৫ অনুচ্ছেদ (ষষ্ঠ-ক ভাগ) বিলোপ করা হয়; এই অনুচ্ছেদে দেশে শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের অনুমতি ছিল। [পৃষ্ঠা ২৬]

বিচারপতি সায়েম আমাদের জানাচ্ছেন, তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে একক দল বাকশাল বাতিল করে বহুদলীয় ব্যবস্থায় দেশকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। খোন্দকার মোশতাক আহমদ ২০ আগস্ট, ১৯৭৫ তারিখ গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছেন, ১৫ আগস্ট প্রভাত হতে তিনি বাংলাদেশের সর্বময় ক্ষমতা গ্রহণ এবং সারা বাংলাদেশে সামরিক আইন জারি করেছেন। বাকশাল বাতিলের ঘোষণাও দেন তিনি। ১৭ সেপ্টেম্বর খোন্দকার মোশতাক ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন নিষিদ্ধ সকল পত্রিকা পুনঃপ্রকাশের অনুমতি দেন। ২৬ সেপ্টেম্বর ১৫ আগস্টের ঘাতকদের দায়মুক্ত দিয়ে জারি হয় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ।

পদ মর্যাদা যাই থাকুক না কেন, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৫ আগস্ট থেকেই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, এ ধারণা যেমন জনমনে বদ্ধমূল, তেমনি তিনি নিজেও সেটা বিভিন্ন বক্তব্যে স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বার দাবি করেছেন, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র তিনিই চালু করেছেন এবং বন্ধ ঘোষিত সংবাদপত্র পুনঃপ্রকাশের অনুমতি তিনিই দিয়েছেন। অথচ তথ্য-প্রমাণ বলছে, এ সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণকারী খোন্দকার মোশতাক আহমদের ঘোষণাবলে। জিয়াউর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর বিচারপতি সায়েমের কাছ থেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ ছিনিয়ে নেন। আর রাষ্ট্রপতির পদ ছিনিয়ে নেন ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল।

১৯৭৬ সালের ২৭ জুলাই বঙ্গভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয। পরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বিচারপতি সায়েম জানান, ৩০ জুলাই থেকে ১ সেপ্টম্বর পর্যন্ত ঘরোয়া রাজনীতি চালু থাকবে এবং এ সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো চার দেয়ালের মধ্যে বৈঠক করতে পারবে। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তারা দলের ঘোষণাপত্র, কর্মসূচি ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করে অনুমোদনের জন্য প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের কাছে জমা দেবে।

তা’হলে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কীভাবে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা হন? সংবাদপত্রের স্বাধীনতাই বা কীভাবে তিনি ফিরিয়ে দেন? প্রকৃতপক্ষে এভাবেই নিজের অজান্তে ভয়ঙ্কর অপরাধের স্বীকারোক্তি মেলে, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা, ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যা, বাংলাদেশ বেতারকে রেডিও বাংলাদেশ-এ পরিণত করা, মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি ‘জয় বাংলা’ পরিত্যাগ করা, সংবিধানের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাদ দেওয়া, মুক্তিযুদ্ধে চেতনার বিপরীতে পাকিস্তানের সামপ্রদায়িক ও গণবিরোধী শাসনের ধারায় বাংলাদেশকে পরিচালিত করা, এ সব কিছুই ঘটেছে জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশে, খোন্দকার মোশতাক আহমদ ও বিচারপতি আবুসাদাত মোহাম্মদ সায়েম ছিলেন শিখন্ডিমাত্র। ১৯৭৬ সালের ৭ মার্চ উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও বিমান বাহিনী প্রধান এম জি তাওয়াব সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে একাত্তরের গণহত্যাকারী আলবদর-রাজাকারদের সমাবেশ করে জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা পরিবর্তন এবং বাংলাদেশকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণার দাবি তোলে। অথচ সে সময়ে সকল ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাÊ, সমাবেশ-মিছিল নিষিদ্ধ ছিল। জিয়াউর রহমান ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাযিত্বে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনাশের দাবি তোলার জন্য স্থান নির্বাচনও ছিল তাৎপর্যপূর্ণ, এই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দি উদ্যানেই পাঁচ বছর আগ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তাঁর দ্ব্যর্থহীন অঙ্গীকারের প্রকাশ ঘটেছিল, কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। এখানেই ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিঃশর্ত আত্মমসমর্পন করেছিল মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে। এখানেই ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে এসে আবেগ-আপ্লুতভাবে বলেছিলেন, আজ আমার জীবনের স্বাদ পূরণ হয়েছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশকে পরিচালিত করা হতে থাকে দেশী-বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীল ও সাম্প্রদায়িক শক্তির অধীনতার পথে। তার নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রথমে জিয়াউর রহমান এবং পরে এইচ এম এরশাদ ও বেগম খালেদা জিয়া।

জিয়াউর রহমান আইয়ুব খানের মতোই নিষ্ঠুর সামরিক শাসনের যাতাকলে বাংলাদেশকে পিষ্ট করতে থাকেন। তার শাসনামলে স্বাধীনতার সপক্ষের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী দিয়ে কারাগারগুলো পূর্ণ থাকে। সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করা হয় হীন রাজনৈতিক অভিলাষ পূর্ণ করার জন্য। বেতার-টেলিভিশনে সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, সংবাদপত্রে কী ছাপা হবে সেটা তদারকির জন্য চালু থাকে কঠোর সেন্সরশিপ ও সেনা প্রহরা। জিয়াউর রহমানের সমর্থক রাজনৈতিক দলগুলো প্রকাশ্যে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে থাকে। জাসদের এম এ জলিল ও আসম আবদুর রব, ওয়ার্কার্স পার্টির কাজী জাফর আহমদ ও হায়দার আকবর খান রনো এবং মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বঙ্গভবনে বিচারপতি সায়েম ও মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছে বার বার দাবি জানায়, ‘আওয়ামী-বাকশালীদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার দেওয়া চলবে না। তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে না।’

বঙ্গবন্ধু একদল গঠন করে গণতন্ত্র বিসর্জন দিয়েছেন, এই অভিযোগ এনে জেনারেল (অব.) এম এ জি ওসমানী ও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করে। কিন্তু ১৫ আগস্টের পর দেখা যায় তারা সামরিক ¯ৈ^রশাসনকে প্রবল উৎসাহে সমর্থন দিয়ে চলেছেন। বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের পক্ষেও তারা উচ্চকণ্ঠ।

এ থেকে স্পষ্ট যে একদল প্রতিষ্ঠার কারণে নয়, বরং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোষিতের গণতন্ত্র কায়েম করে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য যে নতুন ধারার সূচনা করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন সেটাই ছিল ১৫ আগস্টের পরিবর্তনের প্রধান কারণ। জবরদখল করে যারা ক্ষমতা দখল করে, তারা বাংলাদেশকে স্থিতিশীলতার পথ থেকে সরিয়ে নেয়। পরনির্ভরতার মনোভাবে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধাররা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও স্বাধীন বৈদেশিক নীতি এজেন্ডার বাইরে চলে যায়।

বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শন একদিনে গড়ে ওঠে নাই। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ গঠনের সময় তিনি মাত্র ২৯ বছর বয়সেই প্রাণপুরুষে পরিণত হন। সে সময়ে তিনি ছিলেন কারাগারে বিনাবিচারে বন্দি। অভিযোগ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্নবেতনভোগী কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর আন্দোলনের প্রতি সমর্থন এবং এ ইস্যুতে ছাত্র ধর্মঘট আহ্বান। তাকে অন্যায়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়। বলা হয়, মুচলেকা দিলে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তিনি অন্যায়ের কাছে নতিস্বীকার করেননি। এ ঘটনার ২৪ বছর পর ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আলজেরিয়ায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে বলেছিলেন, বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত, শোষক ও শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে। দুই যুগের ব্যবধান, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নৈতিক অবস্থান অভিন্ন।

আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর তিনি আমাদের এ ভূখণ্ডের জেলা-মহকুমা-থানায় সংগঠন গড়ে তোলা ও জনগণকে সচেতন করে তোলার জন্য উল্কার মতো ছুটে বেড়ান। এমন কোনো জনপদ নেই, যেখানে তার পদচিহ্ন পড়েনি। এ সময়ে তিনি বিনা খেসারতে জমিদারি প্রথার অবসান, উচ্চ সিলিং নির্ধারণ করে প্রকৃত কৃষকদের মধ্যে উদ্বৃত্ত জমি বণ্টন, ফসলের ন্যায্য মূল্য প্রদান, স্বায়ত্তশাসন আদায়, গণমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু, শ্রমিকদের ওপর শোষণ-জুলুম বন্ধ করা এবং তাদের ন্যায্য মজুরি প্রদান, শিল্পের প্রসার, বৃহৎ শিল্প জাতীয়করণ, বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ, এ সব দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। ষাটের দশকের মাঝামাঝি বিশেষভাবে সামনে নিয়ে আসেন ছয় দফা, পূর্ণ আঞ্চলিক আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি। এ দাবি জনগণকে স্বাধীনতার পথে অনুপ্রাণিত ও ঐক্যবদ্ধ করে। পাশাপাশি তিনি আর্থ-সামাজিক কর্মসূচিও তুলে ধরতে থাকেন। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে এ সব স্থান পায়।

১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে তিনি গিয়েছিলেন চীনে। মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে মাত্র তিন বছর আগে সমাজতান্ত্রিক বিপ­ব সংগঠিত হয়েছে। ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, ‘খোদা তুমি এদের মঙ্গল করিও। এরা যেন এদের দেশকে দুনিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে পারে। আর আমাদের দেশকেও যেন আমরা সোনার দেশে পরিণত করতে পারি। আমাদের জনগণও যেন সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে বাস করতে পারে।’ [পৃষ্ঠা ৮৪]

চীনের কৃষি সমবায়, কারখানা পরিচালনায় শ্রমিকদের অংশীদারিত্ব, নারী-পুরুষের সমানাধিকার, এ সব তাকে মুগ্ধ করে। শিশু-ছাত্র-যুবকরা যেভাবে সুসংগঠিত, নতুন দেশ গড়ে উঠবেই, এ ধারণা এ সময়ে বদ্ধমূল হয়। তিনি আরও লিখেছেন, ‘নয়াচীনের উন্নতি দেখে আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। যদি দশ বৎসর তারা দেশকে শান্তিপূর্ণভাবে গড়ে তুলতে পারে তবে দেশের জনসাধারণের কোনো দুঃখ-দুর্দশা থাকবে না, অশিক্ষা কুসংস্কার মুছে যাবে।’ [পৃষ্ঠা ১১৮]

বাকশালের আদর্শ ও লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট, কৃষক ও শ্রমিকসহ মেহনতী ও অনগ্রসর জনগণের ওপর শোষণের অবসানের জন্য অর্থনৈতিক মুক্তি ও সামাজিক স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। তিনি প্রশাসনের বিকেন্দ্রিকরণ চেয়েছেন। মহকুমাগুলোকে জেলায় পরিণত করে জেলা গভর্নর পদ সৃষ্টি করেছেন। থানা পর্যায়েও একই ধরনের পরিকল্পনা তিনি প্রকাশ করেছিলেন। রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সকলকে চেয়েছেন বাংলাদেশকে বদলে দেওয়ার মহৎ লক্ষ্য অর্জনে শরীক করতে। বাকশাল কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম সভায় তিনি বহু সহকর্মী, যাদের সাথে দুর্দিনে কাজ করেছেন, বিপদের দিনে কাজ করেছেন, তাদের এক প্লাটফর্মে দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছিলেন, আমাদের আদর্শ হলো বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ইজ্জত সহকারে দুনিয়াতে বাঁচিয়ে রাখা, বাংলার দুঃখী মানুষকে পেট ভরে খাবার দিয়ে শোষণমুক্ত সমাজ গঠন করা, যেখানে অত্যাচার অবিচার জুলুম থাকবে না, দুর্নীতি থাকবে না। আসুন সবাই মিলে সে চেষ্টাই করি।

১৯৭৫ সালেল ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের জনসভায় বলেছিলেন, ‘এ বছর আমাকে ৬ কোটি মন ( ২২ লাখ টনের বেশি) খাবার আনতে হবে। কী করে মানুষ বাঁচাবো। কী করে অন্যান্য জিনিশ কিনবো?’ বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার এ আক্ষেপ ঘুচিয়ে ছিলেন দুই যুগ পর। কঠিন লড়াই শেষে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনে তিনি ২০০০ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতে পারেন। তারও দুই বছর আগে ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন চালু করেছিলেন প্রমত্ত যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতু। বিশ্বব্যাংক ও অন্য ‘সাহায্যদাতারা’ এ সেতুতে রেললাইন চায়নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছিলেন, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ যুগোপযোগী করার জন্য রেললাইন অবশ্যই রাখতে হবে। এপার-ওপার গ্যাস পাইপলাইনও নিতে হবে। তাঁর প্রচেষ্টা সফল হয়েছিল। এর এক যুগ কাটতে না কাটতেই এলো নতুন চ্যালেঞ্জ, প্রমত্ত পদ্মায় সেতু নির্মাণ। একাত্তরের চেতনায় যাদের বিশ্বাস নেই, আত্মনির্ভর বাংলাদেশ যাদের গায়ে জ্বালা ধরায়, ‘ভিক্ষুকের জাতির ইজ্জত নাই’, বঙ্গবন্ধুর এ আত্মমর্যাদাসম্পন্ন অবস্থানের বিপরীতে যারা মনে করে ‘দরিদ্র দেশ থাকলেই উন্নত দেশের ভিক্ষা মেলে’, সেই সব অপশক্তির চক্রান্তে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক যখন ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হতে পারে’, এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে এ প্রকল্পের ঋণ প্রত্যাহার করে নেয়, তখন বঙ্গবন্ধু কন্যা দৃঢ়সংকল্প ব্যক্ত করেন, নিজেদের অর্থেই দেশের সবচেয়ে বড় যোগাযোগ অবকাঠামো প্রকল্প নির্মিত হবেই। এক যুগ আগে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে যখন বঙ্গবন্ধু কন্যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের কর্মপন্থা সামনে আনেন, কত ব্যঙ্গ বিদ্র“প। অথচ এখন উন্নত বিশ্বও স্বীকার করে নিচ্ছে, তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিস্ময়কর। বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ­বের ডাক দিয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। তাকে ষড়যন্ত্র করে হত্যার পর ৩০ লাখ নারী-পুর“ষ-শিশুর রক্তে অর্জিত এ ভূখণ্ডে নেমে এসেছিল ঘোর অন্ধকার যুগ। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম এ হতাশার সময় কাটিয়ে উঠতে যত্নবান। তাদের শপথ, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সফল বাস্তবায়ন হবেই।

এ সবই হচ্ছে বাকশালের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাস্তবায়ন। করোনার হানা, আমপানের দাপট, পাহাড়ি ঢল ও অতিবর্ষণের শঙ্কার মুখে যখন বাংলাদেশ কেবল বোরো মৌসুমেই দুই কোটি টনের বেশি বোরো চাল ঘরে তুলতে পারে, যখন বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (এফএও) বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেয়, বাংলাদেশে আগামী ছয় মাসের বেশি খাদ্য শস্য মজুদ রয়েছে, এভাবেই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বাকশালের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার লক্ষ্য বাস্তবে রূপ নেয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিশেষভাবে জাতিসংঘ যখন বিশ্বকে জানিয়ে দেয়, বাংলাদেশ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মিলেনিয়াম ডেভলেপমেন্ট গোল-এর লক্ষ্যসমূহ অর্জন করেছে এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনেও এগিয়ে চলেছে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়ে, যখন বলা হয়, বাংলাদেশ নির্ধারিত সময়ের আগেই মধ্যম আয়ের দেশের সারিতে পাকাপোক্ত আসন দখল করে নেবে, এশিয়ার উন্নত দেশগুলোর সারিতে আসনলাভও সুদূর পরাহত নয়, এ সবও কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আত্মনির্ভর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দর্শনেরই স্বীকৃতি।

বাংলাদেশ পথ হারাবে না, সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা আজ আর নিছক স্বপ্ন বা দূরের ভাবনা নয়। জাতির পিতা যেমনটি চেয়েছিলেন, তিনি দেখে যেতে পারেননি। তিনি বলেছিলেন, তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে মানবিকতা বিদায় নেবে, বাঙালির জীবন আগের মতো হবে না। আমাদের সৌভাগ্য, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর অনুসারী ও আদর্শের সৈনিকেরা অশেষ সাহসে-সৃজনে-উদ্ধাবনে সেই স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে চলতে পারছে লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে, গৌরবদৃপ্ত পদক্ষেপে।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত