টুকরো কথার সামান্য ইতিকথা

2169

Published on সেপ্টেম্বর 9, 2020
  • Details Image

কাজী রোজীঃ

১৯৬৫ সাল, তোমার সাথে আমার সখ্যকাল। গভ. ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ, কত কত বসন্ত চলে গেছে, বৈশাখ চলে গেছে, ছুঁয়ে গেছে রাজনীতির ঢেউ। বদলেছে দেশ কাল সময়ের প্রেক্ষাপট। প্রায় প্রায়ই সাক্ষাৎ হয়েছে আমাদের হয়েছে কুশলবিনিময়।

ভাব আর ভালোবাসার উচ্চারণগুলো এবং নান্দনিক শব্দগুলো কলেজের সীমানার কৃষ্ণচূড়ার ডালে আজও আছে অম্লান স্মৃতিময় বিশ্বাস ছুঁয়ে। বন্ধু, বেশিদিন আগের তো কথা নয়। এই তো সেদিন দারুণ ষাটের দশক, ’৬৫, ’৬৬, ’৬৭, ’৬৮, ’৬৯-এর আন্দোলনের দিন।

আমরা ক’জন সতীর্থ কলেজে শহিদ মিনার গড়ব ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু প্রিন্সিপাল আপা বাধ সাধলেন। তিনি আটকে রাখলেন আমাদের কয়েকজন সতীর্থকে। বাইরে থেকে প্রতিবাদ উঠল সতীর্থদের ছেড়ে দিন, আমরা কাজ করব। তারপর আমরা মুক্তি পেয়েছিলাম এবং তোমার মনে পড়ে বন্ধু, আমরা আমাদের স্বপ্নের শহিদ মিনার গড়েছিলাম। শহিদ মিনার গড়ার এই সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন হাসিনা, মিনু ও জেলী প্রমুখ বন্ধুরা ।

একা একা বসে থাকা, একা একা কথা বলা, তোমার স্বভাবে সেটা ছিল না তা আমি জানি। তবুও এগিয়ে যাওয়া ফুরত না, কথাও ফুরত না, ক্যান্টিনে বসে আড্ডাও ফুরাত না। ক্যান্টিনবয় মোহাম্মদ আলী আমাদের তাগিদ দিত ‘ঘণ্টা শেষ হয়েছে বাড়ি যান আফারা, আমি রুম পরিষ্কার করুম’। মনে পড়ে বন্ধু, সিঙ্গাড়াটুকু রেখে দিয়ে তুমি বলতে ‘চলো যাই, ওদের কাজ ওদেরকে করতে দিতে হবে’। আজও মনে পড়ে সেই দিনের কথা।

বন্ধু হাজার কথা বলা যায়, লক্ষ কথা বলা যায়, তবু কিছু কষ্টের কথা নীরবে নিভৃতে রয়ে যায়। সেই কষ্টগুলো অন্যরকম কষ্ট। ঝড়ের আলামত আছে ঝড় দেখা যায় না। ভিন্ন ভিন্ন রূপে তোলপাড় করে কুঠুরি হৃদয়, জানি বন্ধু। নির্যাতনের বেহালা বাদকও থেমে যায় আমাদের কাঁদিয়ে কাঁদিয়ে।

পৃথিবীতে কিন্তু এতটা এরকম কষ্ট সবার নেই, সবার হয় না। বারবার তোমার জীবনকে ধ্বংস করে দেবার এত অপচেষ্টা সবার থাকে না। এখন তুমি মানবতার মাতা। এখন তুমি উন্নয়নের রোলমডেল। শিশু নারী যুব-তরঙ্গের ভাষা বুঝে নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছ। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুবিধা দেওয়ার জন্য ছুটে বেড়াচ্ছ তুমি দেশ এবং বিদেশের সর্বত্র। নৌকার হাল ধরে আওয়ামী লীগের পাল তুলে দেশের নির্বাচনের বিজয় গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য অনবদ্য তোমার ভূমিকা। তুমি জন্ম-জন্মান্তরের অদম্য প্রতিভূ একজন। হাজার কথার বনলতা মনজুড়ে থাকলেও সব কথা বলা যায় না। আমরা যে ক’জন সতীর্থ বন্ধু ছিলাম সবাই এখন কে কোথায় জানি না। তবে টোকা দিলেই ঝরে যাব এরকম ফুল আমরা নই। আমরা এখন সব বুঝি, সব জানি, সব টের পাই। আমরা এখন বাংলার টেকসই নারীকুল।

লেখক : জাতীয় সংসদ সদস্য এবং বিশিষ্ট কবি

সূত্রঃ উত্তরণ

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত