দেশরত্ন শেখ হাসিনা: প্রজন্মের অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব

4641

Published on সেপ্টেম্বর 22, 2020
  • Details Image

ড. অরুণ কুমার গোস্বামীঃ

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুযায়ী প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার জন্য বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মের সামনে কোনও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব আছেন কী ? বর্তমানের স্বপ্ন ও ভবিষ্যতের বাস্তব উন্নত সমৃদ্ধ ও মনুষ্য বসবাস উপযোগী বাংলাদেশের জন্য প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশপ্রেম, সততা, মানবিকমূল্যবোধসম্পন্ন মানুষই বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন মানুষের সহজাত গুণ হচ্ছে দেশপ্রেম, সততা, বিনয় ও মানবিক মূল্যবোধ। আর তাই এই আদর্শ ও চেতনার দ্বারা নিজেকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রজন্মের জন্য একজন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব থাকা অপরিহার্য। যার জীবন-যাপন ও কর্মকান্ড দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্ম দেশপ্রেম, সততা ও মানবিকমূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে। অনুসরণীয় এই ব্যক্তিত্ব ত্রুটিহীন না হলেও তাঁর গুণাবলী, বৈশিষ্ট্য এবং কর্মকান্ড মানুষের কাছে অনুসরণীয় হবে। প্রসঙ্গক্রমে, এধরনের অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব বা রোল মডেল-এর বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলী উল্লেখ করা যেতে পারে। যেসব বৈশিষ্ট্য একজন ব্যক্তিকে অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বে বা ইংরেজিতে যাকে বলে ‘রোল মডেল’এ পরিণত করে সেগুলো হচ্ছে আত্মবিশ্বাস ও নেতৃত্ব দেয়ার গুণাবলী; যিনি সৎ ও দেশপ্রেমিক; দেশ ও জাতির প্রতি যিনি অঙ্গীকারাবদ্ধ; বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি যার আপসহীন অঙ্গীকার; গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি যিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ; যিনি সবার সাথে যোগাযোগ রাখেন ও নিরন্তর পরস্পরিক মিথস্ক্রিয় থাকেন; যিনি অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সহানুভূতিশীল ও উদ্বিগ্ন থাকেন; যিনি বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন এবং সুমার্জিত; যার মধ্যে বিনয় ও নম্রতা থাকে; নিজের কাজের বাইরেও যিনি দায়িত্ব পালন করে থাকেন এবং জীবন ও কর্মস্থলের চ্যালেঞ্জগুলোকে যিনি সততা ও দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করেন।

উল্লিখিত গুণাবলীসম্পন্ন বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে সর্বাগ্রে যাঁর নাম আসে তিনি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দৈনন্দিন জীবন-যাপন, সকালে ঘুম থেকে ওঠা, নিজের কাজ নিজে করা, বিশেষ চাহিদা-সম্পন্ন শিশুদের সাথে ভিডিও কলের মাধ্যমে সাক্ষাৎ করা,বই পড়া, ধর্র্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, গরীব-দু:খী অসহায় মানুষের কাছে সাহাযের হাত বাড়িয়ে দেয়া, সৎ ভাবে চলা, দায়িত্ব সচেতন, আন্তরিক, দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি মমত্ববোধ, দেশের উন্নয়নে যোগ্য নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতার প্রমাণ রাখা, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনা,সাহসিকতা ও দৃঢ়তা প্রভৃতি গুণাবলী খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রজন্মের জন্য অনুসরণযোগ্য। আর এইসব কারণেই তিনি বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। প্রসঙ্গক্রমে, দেশরতœ শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন ও কর্র্ম সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হচ্ছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছার পাঁচ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠতম সন্তান বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। শৈশবের বেশীরভাগ সময় শেখ হাসিনা তার নিজ জন্মস্থান গ্রামেই অতিবাহিত করেন। ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু যখন প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তখন তাদের পরিবার ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। তাঁর ছাত্র জীবনে শেখ হাসিনা ১৯৬৬ সালের ৬-দফা আন্দোলনে এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। উল্লেখ্য, গণঅভ্যুত্থানের ফলেই জেনারেল আইয়ুব পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। শেখ হাসিনা ইডেন কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এছাড়া তিনি ইডেন ইন্টারমিডিয়েট কলেজ ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন এবং রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ছিলেন।

১৯৬৮ সালে তিনি খ্যাতনামা পরমানু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই তাদের প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর দ্বিতীয় সন্তান সায়মা ওয়াজেদ হোসেন ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পুরো পরিবারকে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শত্রুরা নিষ্ঠুরতমভাবে হত্যা করেছিল। তিনি ও তাঁর ছোট বোন বিদেশ থাকার কারণে বেঁচে গিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের বেশীরভাগ সদস্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুক্রবার ঢাকার সময় ভোর প্রায় ৪.৪৫ টায় (জার্মান সময় ০০.৪৫ টা) নির্মম হত্যাকান্ডের শিকারে পরিণত হন। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা সেসময় বেলজিয়ামে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদুত সানাউল হক-এর বাস ভবনে অতিথি ছিলেন। জার্মান সাংবাদিক জিসেলা বন (৬৫) এর একটি ফোন কলের মাধ্যমে জার্মান সময় প্রায় ৩.৩০ বিকেলে সেসময় জার্মানস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরি হত্যাকান্ডের খবর জানতে পারেন। এই চরম দু:সংবাদটি মরহুম সানাউল হক-এর টেলিফোন কলের মাধ্যমে জার্মান সময় সকাল ৬.০০ টায় নিশ্চিত হন মি. চৌধুরী। বঙ্গবন্ধুর হত্যার খবর শোনার সাথে সাথে সানাউল হক তার অতিথি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানাকে তার বাসভবন ছাড়তে বলেন। যা ছিল চরম অসৌজন্যমূলক ও অমানবিক। আগের রাত পর্যন্ত যিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যাদ্বয়কে সম্মানের সাথে সম্ভাষণ করেছেন একটি চরম শোক সংবাদের পাবার সাথে সাথে সানাউল হক-এর ভাব পরিবর্তন বেঈমানী ছাড়া আর কিছুই নয়। হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী তখন (টেলিফোনে) বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে ব্রাসেলস থেকে বনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস পর্যন্ত পৌঁছে দিতে বলেন। সানাউল হক তাতেও রাজি হন নাই। কি নির্মম পরিহাস ! পরে এটি সাব্যস্ত হয় যে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তাদের পরিবারবর্গ ব্রাসেলস থেকে জার্মান-বেলজিয়াম সীমান্তস্থ আচেন-এ আসবেন এবং রাষ্ট্রদূত চৌধুরী দুটি গাড়ী আচেন-এ পাঠাবেন এবং সেখান থেকে শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবার বর্গকে চৌধুরী তাঁর কোনিগসউইন্টারস্থ (বন-এর কাছাকাছি একটি গ্রাম) বাসভবনে নিয়ে আসবেন। সে অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর কন্যাদ্বয়ের পরিবার আচেন-এর উদ্দেশ্যে জার্মান সময় সকাল ১০.৩০ টায় ব্রাসেলস ত্যাগ করেন। তাঁরা চৌধুরীর কোনিগসউইন্টারস্থ বাসভবনে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বেলা ১.০০ পৌঁছান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হতে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বন-এ হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর বাসভবনেই অবস্থান করছিলেন। পরে, ১৯৭৫-এর ১৯ আগস্ট ভারতের সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুর জীবিত দুই কন্যা এবং তাদের পরিবারবর্গ দিল্লী পৌঁছান।

ভারতে বাধ্যতামূলক প্রবাস জীবন:

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ১৯ দিন পর তাঁরা ভারত আসেন। প্রায় ছয় বছর তিনি ভারতে অবস্থান করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এসময় জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন। বাংলাদেশে একটি শত্রুভাবাপন্ন সরকার, বাবা, মা, ভাই, ভ্রাতৃবধু, আত্মীয়স্বজন হারানো শোকে কাতর শেখ হাসিনা তখন জার্মানী থেকে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সহযোগিতায় দিল্লীর লাজপত নগর-৩ এ ৫৬ নম্বর রিং রোডের বাসভবনে এবং পরে পান্ডারা মার্কেট এর নিকট পান্ডারা রোডের বাসভবনে থাকতেন। এসময় তিনি, তাঁর বোন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, তাঁর স্বামী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পপন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী ড.এম. এ. ওয়াজেদ মিয়া, দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুল দিল্লীতে থাকতেন।

আওয়ামী লীগ প্রধান নির্বাচিত:

১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এর তিন মাস পরে ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি সরাসরি দিল্লী থেকে স্বদেশ বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্র্তি হয়েছিলাম। জুলাইয়ের দিকে ভর্তি হওয়ার পর জগন্নাথ হলে থাকতাম। ছিয়াত্তরের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কস্থ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্য গিয়েছিলাম আমরা কয়েকজন। কিন্তু পুলিশের পিটুনি খেয়ে কলাবাগান বাসস্ট্যান্ড থেকেই ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম। তার পর থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবীতে ছাত্রলীগের প্রতিটি মিছিল সমাবেশে অংশগ্রহণ করতাম। পরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জগন্নাথ হল, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় এর কার্যনির্বাহী কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলাম। পঁচাত্তর পরবর্তী প্রথম ডাকসু ও হল সংংসদ নির্বাচনে জগন্নাাথ হল ছাত্র সংসদে ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে নাট্য ও সামাজিক আপ্যায়ন সম্পাদক পদে জয়লাভ করেছি। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশরত্ন শেখ হাসিনা যেদিন বর্তমানের হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরে অবতরণ করেন ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সেইদিনে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেছি। স্বদেশ ফিরে আসার পর থেকেই শুরু হয়েছিল দেশরত্ন শেখ হাসিনার সংগ্রামবহুল আর এক জীবন।

সংগ্রাম ও জীবন:

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর ১৯৮২ সাল থেকেই তিনি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদ শুরু করেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনরায় শুরু করার জন্য তিনি এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তিনি প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি ১৫-দলীয় ঐক্যজোট সংগঠিত করেন। এই ঐক্যজোটের কারনেই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। গড়ে ওঠা সামরিক শাসন বিরোধী তীব্র ছাত্র আন্দোলন দমানোর জন্য ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পসে প্রবেশ করে নির্বিচারে লাঠি চার্জ ও গুলি বর্ষণ করতে থাকে। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৫-দলীয় ঐক্যজোটের এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে তিনি (শেখ হাসিনা) থেকে গ্রেফতার করে চোখ বেঁধে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেনানিবাসে তাঁকে ১৫দিন বন্দী করে রাখা হয়েছিল। ১৯৮৪ সালের ফেব্রæয়ারিতে এবং নভেম্বরে তাঁকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল। ১৯৮৫ সালের মার্চ মাসে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং একনাগাড়ে তিনমাস কারাবন্দী করে রাখা হয়েছিল।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টাসহ ১৯ বারেরও বেশী তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। মহান স্রষ্টার অসীম করুণা, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রচেষ্টা এবং জনগণের ভালোবাসার কারণে এসব আক্রমনের হাত থেকে তিনি বেঁচে গিয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন শেখ হাসিনাকে এপর্যন্ত ৩৭টি সম্মাননা পুরষ্কার প্রদান করেছেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার:

বাংলাদেশে খুব কম লোকই ভাবতে পেরেছে যে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কোনদিন হতে পারে! কারন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের মাত্র ৪১ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরে খোন্দকার মোশতাক এই হত্যাকান্ডের বিচার চিরতরে বন্ধ করার লক্ষ্যে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জারিকৃত এই অর্ডিন্যান্স-এর একমাত্র লক্ষ্য ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে এবং সামরিক আইন জারির বিরুদ্ধে যাতে কোন আইনগত পদক্ষেপ গৃহীত না হতে পারে তার ব্যবস্থা করা। ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন, ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধী, ১৯৮৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, রাজিব গান্ধী, রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সফল নায়ক ভøাদিমির ইলিচ লেনিন, পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান বেনজির ভূট্টো, ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট বন্দর নায়েককে গুলি কওে হত্যার পর সেসব দেশে এইসব হত্যাকান্ডের বিচার স্তব্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যে (বাংলাদেশের) ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মত কোন আইন পাস হয় নাই। এই সাথে দেশে অপরাধ করে দায়মুক্তির সংস্কৃতির এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডকে বৈধতা দেয়ার ফলে সহিংসতার সংস্কৃতির সূত্রপাত হয়, যা আত্মস্বীকৃত খুনিদেরকে বিচারের হাত থেকে রক্ষা করেছে। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের গেজেট নোটিফিকেশনে বলা হয়, ‘যেহেতু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে ঐতিহাসিক পরিবর্তন এবং সামরিক আইন ঘোষণার প্রয়োজনে যেসব কাজ করা হয়েছে অথবা এইসব ঘটনার সাথে সম্পর্কযুক্ত অথবা এর প্রস্তুতি অথবা এর জন্য যেকোন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, অথবা প্রয়োজনে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার জন্য যে কোন আইনগত বা কতিপয় কর্মকান্ড সম্পর্কে অন্য কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ বা অন্য কোন আইনগত ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত করাই উপযুক্ত।’

১৯৯৬ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভের পর ওই বছর ২৩ জুন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর বাংলার মানুষের মনের সুপ্ত চাওয়া ’বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার’এর পথ সুগম হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর তৎকালীন আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু দ্য ইনডেমনিটি রিপিল অ্যাক্ট-১৯৯৬ শিরোনামে একটি সংসদে উত্থাপন করেন। ওইদিনই মানবতাবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হয়। রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ এই বিলে সম্মতি প্রদান করেন। এই অধ্যাদেশ বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের বিচারের পথ সুগম হয়।

১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ঘটনায় ঢাকার দায়রা জজ গোলাম রসুল ১৫ জনকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় প্রকাশ করেন। আপিল নিষ্পত্তির পর ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর এই মামলায় বিভক্ত রায় আসে বিচারপতিদের কাছ থেকে। বিচারপতি মো. রুহুল আমিন ১০ আসামির মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন। অপরপক্ষে, বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ১৫ আসামির ফাঁসির আদেশই বহাল রাখেন।

২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম ১২ আসামির মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন। মৃত্যদন্ডপ্রাপ্ত এই ১২ জন আসামী হলো: অবসরপ্রাপ্ত লে.কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশিদ, রাশেদ চৌধুরী, নূর চৌধুরী, মেজর শরিফুল হক ডালিম, ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ, রিসালদার মোসলেহউদ্দীন, লে.কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন, লে. কর্নেল ফারুক রহমান, মেজর বজলুল হুদা, মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ এবং লে. কর্নেল আজিজ পাশা।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডের রায় আংশিক কার্যকর হয় ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে। সে রাতে খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শারিয়ার রশীদ খান ও মহিউদ্দিন আহমেদকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের রায় কার্যকর করা হয়। আজিজ পাশ মারা যায় জিম্বাবুয়েতে ২০০২ সালে। অবশিষ্ট ৬ জন এখনো পলাতক বা রাজনৈতিক আশ্রয়ে বিভিন্ন দেশে রয়েছে। অতি সম্প্রতি ভারতের পশ্চিম বঙ্গে আত্মগোপন করে থাকা ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ দেশে আসার পর আইন শৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। এরপর আদালত কর্তৃক ঘোষিত ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ-এর সাজা বাস্তবায়ন করা হয়।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার:

১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরেরা বাংলাদেশে গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটতরাজ চালিয়েছিল। এসময় ত্রিশ লক্ষেরও বেশী মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। একই সাথে ২.৫০ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি ঘটানো হয়েছিল। প্রায় এক কোটি বাঙালি জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে তাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। এই প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে বিজয় অর্জনের পর যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করে। ২০০৯ সালে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (বাংলাদেশ)। ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মাতৃভূমির বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ২০০৮ সালে তারা একটি রিপোর্ট জমা দেয়। এই রিপোর্টে সন্দেহভাজন ১,৬০০ জন যুদ্ধাপরাধীকে চিহ্নিত করা হয়। এর পরে ট্রাইব্যুনাল গঠনের আগে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচী ২০০৯ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনে সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছিল।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট, ১৯৭৩, ১৯৭৩ সালের ১৯ নং আইন হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছিল। এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল, আন্তর্জাতিক আইনে যারা গণহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং অন্যান্য অপরাধ সংগঠিত করেছে বা এসব অপরাধের জন্য দায়ী তাদের আটক করা, বিচারের সম্মুখীন করা এবং শাস্তি দেয়া। জাতীয়তা নির্বিশেষে যেকোন ব্যক্তি বা ব্যক্তি গোষ্ঠী বা সংগঠন, বা যেকোন সশস্ত্র, প্রতিরক্ষা বা অক্সিলারি বাহিনীর সদস্য, যারা এই আইন প্রণয়নের পরে কিংবা আগে বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে এই আইনের ৩নং সেকশনের উপ-সেকশন [২] অনুযায়ী অপরাধ করে বা করেছে। এই আইনের ৬নং সেকশন-এর অধীনে সরকার গেজেট নোটিফিকেশন দ্বারা সরকার এক বা একাধিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবেন। এই ট্রাইব্যনালে একজন চেয়ারম্যান, এবং দুই জনের কম নয় এবং চারজনের বেশী নয় এমন সংখ্যক সদস্য থাকবেন। দু:খের বিষয় হচ্ছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার এই আইনটি অকার্যকর করে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। জিয়াউর রহমানের পরে এমনকি জেনারেল এরশাদ এবং বেগম খালেদা জিয়াও এই বিচার যাতে না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।

অপরাধ সংঘটিত করার পর পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য সরকার ২০০৯ সালে কিংবা তার পরে সংশোধনীর মাধ্যমে এই আইনটির কিছু তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন করেন। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ অফিসিয়াল গেজেট-এর মাধ্যমে তিনজন বিচারকের সমš^য়ে ‘ট্রাইব্যুনাল’ গঠিত হয়। এই তিনজন বিচারকের একজন চেয়ারম্যান। একই সাথে সরকার আইনের ৭ নং সেকশন অনুযায়ী অভিযোগ গঠনের লক্ষ্যে ‘প্রোসিকিউশন টিম’ এবং সেকশন নং ৮ অনুযায়ী ‘ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি’ গঠন করেন। এছাড়া যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার করার লক্ষ্যে যা যা করা প্রয়োজন সরকার সেইসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

মনুষ্য বসববাস উপযোগী উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার:

অব্যাহতভাবে সংগ্রাম করে দেশরত্ন শেখ হাসিনা প্রথমে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০০৮ এর ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকাকালে উপরোল্লিখিত বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার ছাড়াও দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গিয়েছেন। দারিদ্র্যের হার হ্রাসকরণ, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, আর্র্থ-সামাজিক উন্নয়ন সূচকগুলোতে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি লাভ করার ফলে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। এমনকি বিশে^র জনপ্রিয় ফোর্বস ম্যাগাজিন করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফল নারী নেতৃত্বের তালিকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম স্থান পেয়েছে। এতে বলা হয়েছে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের শুরুতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা এখনো এমনকি যুক্তরাজ্যও কার্যকর করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় ফোর্বস ম্যাগাজিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের প্রশংসা করে লিখেছে, প্রায় ১৬ কোটিরও বেশী মানুষের বসবাস বাংলাদেশে। সেখানে দুর্যোগ কোনো নতুন ঘটনা নয়।। আর এই করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেননি তিনি। তার এই ত্বরিত সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম বিষষয়টিকে প্রশংসিত বলে উল্লেখ করেছে।

মে, ২০২০ মাসের মধ্যবর্তী সময়ে যখন বৈশ্বিক মহামারীর চরম সংক্রমন চলছিল তখন সাইক্লোন আম্ফান বাংলাদেশের সমুদ্র উপপকূলীয় কয়েকটি জেলায় আঘাত হানতে উদ্যত হয়েছিল। করোনাভাইরিাসের সংক্রমন চলাকালে ২০২০এর ১৯ মে সাইক্লোন আম্ফান বাংলাদেশে আঘাত হানে। এসময় উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী লোকজনকে সরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বৈশ্বিক মহামারীর কারণে উপকূলীয় অঞ্চলসমূহ থেকে লোকজন সরিয়ে আনা জটিল হয়ে পড়ে। তবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় তথা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বাংলাদেশ মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে বিদ্যমান ৪,১৭১ টি আশ্রয়কেন্দ্রের অতিরিক্ত ১০,৫০০ অতিরিক্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করতে সক্ষম হয। এভাবে একসাথে দু’টি মহাবিপদ থেকে উপকূলীয় মানুষের জীবন রক্ষা করে একটি অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। একসাথে দু’টি বিপদ, করোনাভাইরাসের সংক্রমন ও সাইক্লোন আম্ফানের আঘাত সম্পর্কে লন্ডনের বিখ্যাত দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় ৩ জুন ২০২০ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন এর এক্সিকিউটিভ অফিসার প্যাট্রিক ভার্কোইজেন একটি নিবন্ধ লেখেন।

এসব গুণ, বৈশিষ্ট্য ও ঘটনাবলীর পাশাপাশি সাম্প্রতিককালের দু’টি বিষয় প্রজন্মের অনুসরণীয় ব্যক্তি হিসেবে দেশরত্ন শেখ হাসিনার অবস্থানের অনন্য উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। গত বৃহস্পতিবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কিশোরী মামিজা রহমান রায়ার মা নাবিহা রহমান পিংকীর মোবাইল ফোনে ভিডিও কল করেন। কিশোরী রায়া ভিডিও কলে প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে শোনান। রায়ার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীও জাতীয় সঙ্গীতে কন্ঠ মিলিয়েছেন। এছাড়া রায়া প্রধানমন্ত্রীকে একটি কবিতা আবৃত্তি করে শুনিয়েছেন বলেও জানা গেছে। রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের প্রধান একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে একজন অটিস্টিক শিশুর সাথে এভাবে আন্তরিকতাপূর্ণভাবে কথা বলা সত্যিই অনন্য।

দেশপ্রেম, সততা, মমানবিকতা, আন্তরিকতা, সকলের প্রতি সৌজন্যবোধ, অসহায় ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন হওয়ার শিক্ষা শেখ হাসিনা কোথা থেকে লাভ করেছেন? এই প্রশ্নের উত্তর তাঁর নিজের কথা থেকেই আমরা জানতে পারি। একাদশ জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমার বাবার নির্দেশ ছিল, একজন রিক্সা ওয়ালাকে আপনি করে কথা বলতে হবে, বাড়ীর ড্রাইভারকে ড্রাইভার সাহেব বলতে হবে। আর কাজের যারা লোকজন তাদের কখনো চাকর বাকর বলা যাবে না, হুকুম দেয়া যাবে না। তাদের কাছে সম্মান করে ভদ্রভাবে চাইতে হবে। যে জন্য প্রধানমন্ত্রী হতে পারি কিন্তু এখনও, আমার বাড়ীতে যে ছোট কাজের মেয়েগুলি বা যারাই আছে কারও কাছে যদি কখনও একগ্লাস পানিও চাইতে হয়, যতদূর পারি নিজে করে খাই আর যদি চাইতে হয় তাহলে কিন্তু তাদেরকে জিজ্ঞাসা করি, আমাকে এইটা একটু দিতে পারবে ? এই শিক্ষাটা আমরা নিয়ে আসছি, এটা এখনও আমরা মেনে চলি। এটা আমার বাবারই শিক্ষা। তিনি শুধু বলে গেছেন তা নয়, তিনি সে শিক্ষাটা আমাদের দিয়েও গেছেন, আমরা দিয়ে যাই। কাজেই সেই দিক দিয়ে, আমরা মনে করি যে আমাকে সকলেরই মানুষ গরীব দেখলে বা ভালো পোশাক না পড়লে তাকে অবহেলা করতে হবে। আমাদের কাছে কিন্তু সেটা না, আমাদের কাছে সবাই সমান সমাদর পায় বরং যাদের কিছু নাই তাদের দিকে আমরা একটু বেশি নজর দেই, দৃষ্টি দেই।”
“আর জিজ্ঞাসা করছেন যে সকালে উঠে আমি কী খুঁজি? আমি জায়নামাজ খুঁজি। সকালে উঠে নামাজ পড়ি। নামাজ পড়ার পর কোরআন তেলওয়াত করি। তারপরে এককাপ চা নিজে বানিয়েই খাই। চা বানাই কফি বানাই যা আমি নিজে বানিয়ে খাই। আমার ছোট বোন আর আমি দুইবোন যে আগে ওঠে সে বানায়। এখন পুতুল আছে আমার মেয়ে আছে, যে ঘুম থেকে আগে ওঠে সেই বানায়, নিজেরা করে খাই। তার আগে বিছানার থেকে নামার সাথে সাথে নিজের বিছানাটা গুছিয়ে রাখি নিজের হাতে। এরপরে বই টই যা পড়ার পড়ি আর ইদানিং এই করোনা ভাইরাসের পর যখন সকালে একটু হাঁটতে বেরই। তবে, আর একটা কাজ করি এখন, সেটা আবার বললে কী হবে (?), গণভবনে একটি লেক আছে মাননীয় স্পীকার, যখন হাঁটতে যাই হেঁটে হেঁটে যখন লেকের পাড়ে বসি তখন একটা ছিপ নিয়ে বসি, মাছও ধরি!” এক অনন্য সাধারণ অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বের অতি সাধারণ ও প্রজন্মের জন্য অনুসরণযোগ্য জীবন যাপনের কাহিনী।

উপরের আলোচনার পরে উপসংহারে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুযায়ী প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার জন্য বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মের সামনে দেশরত্ন শেখ হাসিনা প্রকৃতই অনন্য এবং অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। উন্নত সমৃদ্ধ ও মনুষ্য বসবাস উপযোগী বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য যা প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ।

লেখকঃ অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত