পৃথিবীকে বাঁচাতে শক্তিশালী জলবায়ু জোট গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবান

1935

Published on ডিসেম্বর 10, 2020
  • Details Image

কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও পৃথিবীকে বাঁচাতে শক্তিশালী বৈশ্বিক জলবায়ু জোট গড়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে ‘১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস’ বিশ্ব গড়ার গতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ‘থিম্পু এ্যমবিশন সামিট’ শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্যে তিনি এই তাগিদ দেন।

ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর রেকর্ড করা ভাষণ প্রচার করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, “শতাব্দীর মধ্য ভাগের আগে বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ কার্যকরভাবে হ্রাস করে কার্বন ভারসাম্যতা আনায়নের দিকে এগিয়ে যেতে ইতিবাচক ও শক্তিশালী আন্তর্জাতিক জলবায়ু জোটের গুরুত্বের ওপর জোর দিতে চাই।”

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং কপ২৬ চেয়ার অলোক শর্মা এবং ইউএনএফসিসিসির নির্বাহী সম্পাদক প্যাট্রিশিয়া এসপিনোসা এই সম্মেলনে ভাষণ দেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে লাখ লাখ মানুষের উদ্বাস্তু হওয়ার তথ্য ‍তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে আপনাদের জরুরি ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছি। ইউএনএফসিসিসি আমাদের বৈশ্বিক এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে সবচেয়ে উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম হিসাবে রয়েছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারী আমাদের দেখিয়েছে যে একটি মহামারী কত দ্রুত একটি বিপর্যয়কর বিশ্ব সংকটে পরিণত হতে পারে এবং এটি আমাদের শিখিয়েছে যে জোরালো সম্মিলিত উদ্যোগই বিশ্বব্যাপী সংকট মোকাবেলার একমাত্র উপায়।”

প্রধানমন্ত্রী প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ সংস্থানের জন্য উন্নত দেশগুলোর বাধ্যবাধকতার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

তিনি বলেন, “এমডিবিস, আইএফআইসের রেয়াতি অর্থায়ন এবং কর মওকুফের মাধ্যমে জলবায়ু অর্থায়নে আরও জোরদার ব্যবস্থার জন্য এগিয়ে আসা উচিত এবং সবার জন্য প্রযুক্তির প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা উচিত।”

বিশ্বে সহিংস সংঘাতের চেয়েও চরম আবহাওয়ার কারণে অনেক বেশি লোক বাস্তুচ্যুত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের স্থানান্তর এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক আলোচনায় গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্যারিসে কপ-২১ চলাকালীন বিশ্ব নেতারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং জলবায়ু সহনশীলতা অর্জনে একটি যুগান্তকারী চুক্তিতে সম্মত হন। তাতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল।

“তবে আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে লক্ষ্য অর্জনে আমাদের বর্তমান প্রচেষ্টা অত্যন্ত অপর্যাপ্ত। তাই আমাদের নিজেদের এবং আমাদের গ্রহকে বাঁচাতে বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন সীমাবদ্ধ করতে জোরদার, গতিশীল ও আশু কর্ম-পরিকল্পনা প্রয়োজন।”

জলবায়ুজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য দক্ষিণ এশিয়াকে সবচেয়ে দুর্বল অঞ্চল হিসাবে তুলে ধরে

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রের স্তর এক মিটার বৃদ্ধি পেলে উপকূলীয় এবং ছোট দ্বীপগুলোর লক্ষ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু হয় পড়বে।

“গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট, ক্লাউড আউটবার্স্ট বা ভারী বৃষ্টিপাত ভুটান, নেপাল ও ভারতের বিভিন্ন অংশের মতো হিমালয়ের পাশ্ববর্তী দেশগুলোতে বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলবে।”

বৈশ্বিক উষ্ণায়নে কোনো ভূমিকা না থাকলেও মোকাবেলা করার সীমিত ক্ষমতা এবং নির্দিষ্ট ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের জন্য বাংলাদেশ যে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, তা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

এডিবির পূর্বাভাস তিনি বলেন, বর্তমান হারে কার্বন নির্গমন অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ ২০২০ সালের মধ্যে তার জিডিপির ২ শতাংশ এবং ২১০০ এর মধ্যে ৯.৪ শতাংশ পর্যন্ত বার্ষিক অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে।

“আমি নিশ্চিত যে এটি অন্যান্য এলডিসি এবং জলবায়ুর ঝুকিতে থাকা দেশগুলোর জন্যও সত্য।”

বাংলাদেশের জলবায়ু সহনশীলতা বাড়াতে অভিযোজন এবং প্রশমন কার্যক্রম গ্রহণ করার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত