2679
Published on এপ্রিল 4, 2021শনিবার ভাসান চরে সফর করে সেখানে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের অবস্থা এবং সার্বিক পরিস্থিতি দেখে এসেছেন বিদেশি কূটনীতিকদের একটি দল। রোহিঙ্গারা তাঁদের কাছে নিজেদের সন্তুষ্টি ব্যক্ত করেছেন এবং নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের একটি দল ভাসান চরে নির্মিত আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন গুচ্ছগ্রাম সফর করেছেন। ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার, ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট ডিকসন, কানাডীয় হাই কমিশনার বেনোয়া প্রিফঁতেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনজি টিরিংক, ফরাসি রাষ্ট্রদূত জ্যাঁ মারিও সুশো, জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহল্টৎস, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভারউইজ, জাপানি রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো, অস্ট্রেলীয় হাই কমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার এবং তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা উসমান তুরান কূটনীতিক প্রতিনিধি দলে ছিলেন।
স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করার অংশ হিসাবে শনিবার এই পরিদর্শনের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছেন রাষ্ট্রদূতেরা এবং তাদের ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেছেন।
ভাসানচরের সুযোগ সুবিধা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে "খুবই সন্তুষ্ট" এবং কক্সবাজারের ঘিঞ্জি ক্যাম্পের চেয়ে অনেক নিরাপদ বলে মন্তব্য করেছেন ভাসানচরের বাসিন্দারা।
গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ সরকারের অনুকরণীয় মানবিক সাহায্য প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানান তারা।
"আমি চাই আমার বাচ্চারা তাদের নিজের দেশে নিজস্ব পরিচয় নিয়ে বেড়ে উঠুক", কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে বলেন একজন রোহিঙ্গা প্রতিনিধি।
অনেক রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য লেখাপড়ার সুযোগ বাড়ানো এবং কৃষিকাজ ও মাছ ধরার সুযোগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন যাতে তাদের অলস বসে না থাকতে হয়।
মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভাসানচরে সরকারের নেওয়া ব্যাপক উন্নয়ন ও মানবিক কার্যক্রম কূটনীতিকদের দেখানো ছিল এই পরিদর্শনের উদ্দেশ্য।
কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নিয়ে থাকা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে দুই বছর আগে তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসান চরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোটামুটি ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে একলাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বিরোধিতার মধ্যে গত ৪ ডিসেম্বরে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা শুরু করেছিল বাংলাদেশ সরকার।
দুপক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে ওই সময় এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ বলেছিল, “এই স্থানান্তর প্রক্রিয়ার প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমে, অথবা শরণার্থীদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। স্থানান্তরের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই।”
এর পাল্টায় বাংলাদেশ সরকার বলেছিল, “এই পর্যায়ে এসে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একমাত্র বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হওয়া উচিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে দায়িত্ব নিয়ে এবং কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত হওয়া, সেটাই সমস্যার একমাত্র স্থায়ী সমাধান।
“একইসঙ্গে আমরা বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিক চেষ্টাকে খাটো করা এবং ভুল ব্যাখ্যা না করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরুর সাড়ে তিন মাস গড়ানোর পর ১৭ মার্চ প্রথমবারের মতো ভাসানচর পরিদর্শনে যায় জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধিদল। এর মধ্যে সরকারও ছয় দফায় ১৮ হাজার ৩৩৪ জন রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তর করেছে।
জাতিসংঘ দলের পরিদর্শনের দুই সপ্তাহের মাথায় শনিবার ১০ বিদেশি দূতকে ভাসানচরে নিয়ে যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই দুদলের বাইরে কেবল ওআইসির সহকারী মহাসচিবের নেতৃত্বে সংস্থার একটি প্রতিনিধিদল ভাসানচর পরিদর্শনে গিয়েছিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরিদর্শনে গিয়ে বিদেশি দূতেরা বাঁধ, ভবন, আশ্রয়কেন্দ্রসহ ভাসানচর দ্বীপের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ঘুরে দেখেছেন। একইসঙ্গে তারা ঘুরে দেখেন সেলাই ও হাতের কাজের মতো রোহিঙ্গাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিভিন্ন উদ্যোগও।
ভাসানচরে নির্মিত উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকেন্দ্রে খুদে শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও সময় কাটান বিদেশি দূতেরা।
পরিদর্শনের সময় বিদেশি দূতদের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব মো. মোহসীন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব খুরশেদ আলম, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত উপস্থিত ছিলেন।