নির্বাচনী ইশতেহার ২০২৪ঃ সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষায় আবশ্যক পদক্ষেপ নেয়া অব্যাহত রাখবে

392

Published on ডিসেম্বর 28, 2023
  • Details Image

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে ‘দিন বদলের সনদ‘, ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ ‘তারুণ্যের শক্তি’, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’র পর এবার ‌‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ইশতেহার দিল। সেই ইশতেহারে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিয়ে কী করতে চায়; জানালো তারা। আবার সরকারে এলে দলটি তাদের জন্য কী কী ব্যবস্থা নেবে তা জানিয়েছে। এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের শ্লোগান হলো স্মার্ট বাংলাদেশ : উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান।

ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু-

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৪৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৩০ লাখের অধিক জনসংখ্যা বসবাস করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে তাদের জীবন, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও আশা-আকাঙ্খা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সংবিধানে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সম-অধিকার ও মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। সেই আলোকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অবসান ঘটানো; তাদের জীবন, সম্পদ, উপাসনালয় ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় এবং জীবনমানের উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

সাম্প্রদায়িকতা যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বাংলাদেশ। মুসলমান তার ধর্মকর্ম করবে। হিন্দু তার ধর্মকর্ম করবে। বৌদ্ধ তার ধর্মকর্ম করবে। কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবে না বলেও জানান আওয়ামী লীগ প্রধান।

উন্নয়ন ও অগ্রগতি

*ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জমি, বসতভিটা, উপাসনালয়, বনাঞ্চল, জলাভূমি ও অন্যান্য সম্পদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জমি ও বন এলাকায় অধিকার সংরক্ষণের জন্য ভূমি কমিশনের কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

*ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগণকে সমাজের ও উন্নয়নের মূলস্রোতে আনার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

*অনগ্রসর ও অনুন্নত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও চা-বাগান শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা এবং সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত আছে।

*ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

*ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়গুলোর বৈচিত্র্যময় রীতিনীতি ও ঐতিহ্যগুলোকে সংরক্ষণ এবং প্রদর্শন করার জন্য সরকারের তরফ থেকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

*বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জাতিগত সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে।

*পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয় আঞ্চলিক পরিষদ এবং জেলা পরিষদের কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে। ফলে স্থানীয়, ভৌগোলিক, আর্থসামাজিক পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

*তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটনশিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্পের বিকাশে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উচ্চমূল্যের মসলা চাষ, কফি-কাজুবাদাম চাষ, তুলা চাষ, সৌরবিদ্যুৎ ইত্যাদি জনমুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

*মন্দির, শ্মশান, প্যাগোডা, গির্জা, সিমেট্রির উন্নয়নে অনুদান প্রদান ও উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টসমূহের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সার্বিক কল্যাণ সাধনে নিয়মিত কার্যক্রমসমূহ অব্যাহত আছে।

ইশতেহারে আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার

*সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৩(ক) তে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ সংবিধানের এই ধারা সুরক্ষায় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে

*আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় সংসদে অর্পিত সম্পত্তি আইন সংশোধন করা হয়েছে এবং অর্পিত সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট সমস্যা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইন প্রয়োগে বাধা দূর করা হবে।

*সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন এবং সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হবে। আওয়ামী লীগ ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আবশ্যক পদক্ষেপ নেয়া অব্যাহত রাখবে।

*বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ‘এথনিক ক্লিনজিং’ অপনীতির কবলে পড়ে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিংস্র আক্রমণ ও বৈষম্যের শিকার হয়। ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অসংখ্য নর-নারী নিহত হয়েছে; অসংখ্য নারী হয়েছে ধর্ষণের শিকার; তাদের ঘরবাড়ি, জমি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল ও লুণ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ এ অমানবিক ঘটনাগুলোর বিচারকার্য সম্পন্ন করবে এবং তার পুনরাবৃত্তি হতে দেবে না।

*বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও চা-বাগানে কর্মরত শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর ওপর সন্ত্রাস, বৈষম্যমূলক আচরণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের চির অবসান, তাদের জীবন, সম্পদ, সম্ভ্রম, মান-মর্যাদার সুরক্ষা এবং রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করার নীতি অব্যাহত রাখবে।

*বস্তি, চর, হাওর, বাওড়, উপকূলসহ দেশের সকল অনগ্রসর অঞ্চলের সুষম উন্নয়ন এবং ওই সব অঞ্চলের জনগণের জীবনের মানোন্নয়ন অগ্রাধিকার পাবে।

অনগ্রসর জনগোষ্ঠী-

দলিত ও অবহেলিত জনগোষ্ঠী-

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি অংশ দলিত, হরিজন ও বেদে সম্প্রদায়। সমাজে চরমভাবে অবহেলিত, বিচ্ছিন্ন, উপেক্ষিত এ জনগোষ্ঠী। তাদের জীবনমান উন্নয়ন এবং তাদের মূলস্রোতে নিয়ে আসার কর্মসূচি বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ অঙ্গীকারাবদ্ধ।

উন্নয়ন ও অগ্রগতি-
* দলিত, হরিজনদের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোররেশনে ফ্লাট নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে।
* মান্ডা, হিজরা কুষ্ট রোগীদের অর্থ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ২ কাঠা জমিতে ঘর করে দেয়া হয়েছে।
* ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে পাইলট কর্মসূচির মাধ্যমে ৭টি জেলায় বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই কর্মস‚চি সম্প্রসারণ করে মোট ৬৪ জেলায় এই কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে।
* ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেদে জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি স্বতন্ত্র দুটি কর্মসূচিতে বিভক্ত করা হয়। দুটো কর্মসূচিই সম্প্রসারিত করা হয়েছে।
* অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা ৮২ হাজার ৫০৩ জনে উন্নীত হয়েছে। বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫৪ হাজার ৩০০ জনে উন্নীত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি দেয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার-

*বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে।
* বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। যাতে তারা আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে সমাজের মূল স্রোতোধারায় আসতে পারে।
* অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য নগদ সাহায্য ও বাসস্থান প্রদান কর্মসূচি সারা দেশে সম্প্রসারিত করা হবে।

হিজড়া জনগোষ্ঠী-

হিজড়া সম্প্রদায় বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ। আবহমানকাল থেকেই এ জনগোষ্ঠী সমাজ ও রাষ্ট্রজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন ও উপেক্ষিত, মানবেতর জীবন যাপন করছে। আওয়ামী লীগ সরকার হিজড়া সম্প্রদায়ের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে তাদেরকে সমাজের মূলস্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে নানা কল্যাণমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

উন্নয়ন ও অগ্রগতি

* সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু হয়। হিজড়া জনগোষ্ঠীর ভাতাভোগীর সংখ্যা ২০০৬ সালে ১ হাজার ১২ জন ছিল, যা ২০২২-২৩ সালে ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৬ হাজার ৮৮৪ জন হয়েছে। বিশেষ ভাতা পান ৫ হাজার ৬২০ জন।
* ২০১৪ সালে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। ২০১৯ সালে হিজড়ারা স্বতন্ত্র লৈঙ্গিক পরিচয়ে ভোটাধিকার লাভ করে।
*২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ৬৪টি জেলায় হিজড়া জনগোষ্ঠীর ভাতা, শিক্ষা উপবৃত্তি এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে এ কর্মসূচির ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তির নগদ সহায়তা উপকারভোগীর মোবাইল হিসাবে দেয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার-

১. হিজড়াদের সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত এবং তাদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ, শিক্ষা, বাসস্থান ও জীবনমান উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
২. হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য নগদ সাহায্য ও বাসস্থান প্রদান কর্মসূচি সারা দেশে সম্প্রসারিত করা হবে।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত