আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু: জেলগেটের নিত্য সঙ্গী ফজিলাতুন্নেচ্ছা

2308

Published on জুন 15, 2021
  • Details Image

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবনে ৪৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। ব্রিটিশ আমলে স্কুলজীবন থেকে শুরু হয়েছে তারা কারাবরণ। এসময় বঙ্গবন্ধু ৭ দিন কারা ভোগ করেন। বাকি ৪ হাজার ৬৭৫ দিন কারা ভোগ করেছেন পাকিস্তান সরকারের আমলে। ৫৪ বছরের জীবনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সময় কারাগারেই কাটাতে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে।পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনকালে বঙ্গবন্ধু ১৮ বার জেলে গেছেন, প্রায় ১৩ বছর কেটেছে কারাগারে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে বন্দি হিসেবে নেওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। এই সময়টায় ঢাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সামরিক বাহিনীর প্রহরায় গৃহবন্দি অবস্থায় ছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।

এর আগে, এক যুগের মতো সময় বঙ্গবন্ধু ঢাকার কারাগার ও ক্যান্টমেন্টে বন্দি থাকাকালে ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিব তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। এই প্রসঙ্গে ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন, ‘কারাগারে সাক্ষাৎ করতে যারা যায় নাই, তারা বুঝতে পারে না সেটা কী বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক। ভুক্তভোগীরা কিছু বুঝতে পারে। .... এই সাক্ষাৎকে প্রহসনও বলা চলে।’

কারাগারে সাক্ষাতের অনুভূতির বিষয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় একজন আইবি কর্মচারী বসে থাকত, আর জেলের পক্ষ থেকেও একজন ডিপুটি জেলার উপস্থিত থাকতেন। .... স্ত্রীর সাথে স্বামীর অনেক কথা থাকে কিন্তু বলার উপায় নেই। আমার মাঝে মাঝে মনে হতো স্ত্রীকে নিষেধ করে দেই যাতে না আসে। ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত আমার স্ত্রীকে নিষেধ করে দিয়েছিলাম ঢাকায় আসতে, কারণ ও তখন তার দুইটা ছেলেমেয়ে নিয়ে দেশের বাড়ি থাকত।’

বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ শাসনামলে। কৈশোরেই তাকে কয়েকদিন কাটাতে হয় চার দেয়ালের মাঝে।

দেশভাগের পরই জেলজীবন শুরু

পাকিস্তান আমলে প্রথম গ্রেফতার হন ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ডাকা হরতালের পিকেটিং করতে গিয়ে। পরের বছর১৯৪৯ সালের ১৯ এপ্রিল গ্রেফতার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিম্নবেতনভুক্ত কর্মচারীদের আন্দোলন সমর্থন করার কারণে। এ সময়ে ১৫ টাকা জরিমানা না দেওয়া ও মুচলেকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়। সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টালিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি ন্যাশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রথম খণ্ড থেকে জানা যায়: দুই মাসের বেশি সময়ের এই বন্দি জীবনে মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করেছিলেন চট্টগ্রামের তরুণ মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী। তিনি বলেছিলেন, ‘আপস কর, ক্ষমা চাও’। কিন্তু তিনি এই প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছিলেন।

এই গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে আরো জানা যায়, ১৯৪৯ সালের ৭ জুন নিরাপত্তা বন্দি পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন পিতা শেখ লুৎফর রহমান। ১১ জুন একই জেলে পিতা-পুত্রের ফের সাক্ষাৎ ঘটে। ২২ জুন কারাগারে সাক্ষাৎ করেন ছোট বোনের স্বামী আবদুর রব সেরনিয়াবাত। ২৬ জুন বঙ্গবন্ধু মুক্তিলাভ করেন।

এরপর তিনি গ্রেফতার হন ওই বছরেরই (১৯৪৯) শেষ দিনে। কারাগারে থাকেন দুই বছরের বেশি, ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। বঙ্গবন্ধু নিজেই লিখেছেন, স্ত্রীকে ঢাকা কারাগারে সাক্ষাৎ প্রার্থী হতে নিষেধ করেছিলেন। তবে এই জেল জীবনের এক পর্যায়ে ১৯৫০ সালের শেষ দিকে একটি মামলায় বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জের আদালতে হাজির করার জন্য স্টিমারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ''মধুমতি নদীর পাটগাতি স্টিমার ঘাটে নামার পর খবর মেলে, পূর্বের রাতে আমার মা, আব্বা, রেণু ছেলেমেয়ে নিয়ে ঢাকায় রওনা হয়ে গেছেন আমাকে দেখতে। এক জাহাজে আমি এসেছি। আর এক জাহাজে ওরা ঢাকা গিয়েছে। দুই জাহাজের দেখাও হয়েছে একই নদীতে। শুধু দেখা হল না আমাদের। এক বৎসর দেখি না ওদের। মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল।''

ত্রিশ বছরের যুবক তখন বঙ্গবন্ধু। স্ত্রীর বয়স ২০ বছর। কারাগারের রোজনামচায় লিখেছেন, ‘নিষ্ঠুর কর্মচারীরা বোঝে না যে স্ত্রীর সাথে দেখা হলে আর কিছু না হউক একটা চুমু দিতে অনেকেরই ইচ্ছা হয়, কিন্তু উপায় কী?’

গোপালগঞ্জের আদালতে এই মামলা চলাকালে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থানায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কয়েকবার সাক্ষাতের সুযোগ পান। এ প্রসঙ্গে একটি মর্মস্পর্শী বিবরণ রয়েছে এভাবে, ‘‘আব্বা, মা, রেণু খবর পেয়ে সেখানেই আসলেন। ... কামাল কিছুতেই আমার কাছে আসল না। দূর থেকে চেয়ে থাকে। ও বোধ হয় ভাবত, এ লোকটা কে?’ আরেকবারের সাক্ষাতের ঘটনা লিখেছেন এভাবে, ''হাচু আমাকে মোটেই ছাড়তে চায় না। আজকাল বিদায় নেওয়ার সময় কাঁদতে শুরু করে। কামালও আমার কাছে আসে এখন। হাচু ‘আব্বা’ বলে দেখে কামালও ‘আব্বা’ বলতে শুরু করেছে।'

স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ''রেণু আমাকে যখন একাকী পেলো, বললো: জেলে থাক আপত্তি নাই, তবে স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখ। তোমাকে দেখে আমার মন খুব খারাপ হয়ে গেছে।''

বঙ্গবন্ধুর এই জেলজীবনের সময়েই রচিত হয় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির অমরগাঁথা। বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক সহকর্মী মহিউদ্দিন আহমদকে সঙ্গে নিয়ে অনশন শুরু করেন ফরিদপুর জেলে। সালাম-বরকতের আত্মদানে বদলে যায় এ ভূখণ্ডের ইতিহাস। মুসলিম লীগ জনমনে ধিকৃত সংগঠন হিসেবে গণ্য হতে থাকে। আওয়ামী লীগ পরিণত হয় জনগণের সংগঠনে। ২৭ ফেব্রুয়ারি মুক্ত হওয়ার পর শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে ওঠেন দলের কাণ্ডারি, প্রাণপুরুষ। মুক্তির পর কয়েকদিন বাড়িতে কাটান। পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা-বেদনার কথা ফুটিয়ে তুলেছেন এভাবে, ''একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল।... এক সময় কামাল হাচিনাকে বলছে, ‘হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।' আমি আর রেণু দুজনেই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, 'আমি তো তোমারও আব্বা'।''

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জেলের সময়গুলো

১৯৫২ সালের ২৬ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু আওয়ামী মুসলিম লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরের বছর, ১৯৫৩ সালে, নির্বাচিত হন সাধারণ সম্পাদক। গোটা বাংলাদেশ চষে বেড়াতে থাকেন সংগঠন গড়ে তোলার জন্য। ১৯৫৩ সালের ১৪ মে গোয়েন্দারা জিপিও থেকে বঙ্গবন্ধুর একটি চিঠি আটক করে, যাতে ৫ মে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন: ‘স্নেহের রেণু। আজ খবর পেলাম তোমার একটি ছেলে হয়েছে। তোমাকে ধন্যবাদ। খুব ব্যস্ত, একটু পরে ট্রেনে উঠব। ইতি তোমার মুজিব।’ গোয়েন্দা রিপোর্টের তৃতীয় খণ্ড থেকে আরো জানা যায়, বঙ্গবন্ধু ৫ মে ঢাকার ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশন থেকে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীসহ ঈশ্বরদীগামী ট্রেনে ওঠেন। ৬ মে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ মাঠের জনসভায় ভাষণ দেন। কিন্তু ওই চিঠিটি গোয়েন্দারা শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল কিনা, সেটি আর উল্লেখ করা নাই কোথাও।

যাই হোক, ১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জেল থেকে বের হওয়ার পর দুই বছর দুই মাস তিনি মুক্ত জীবনে কাটাতে পারেন। এই সময়েই অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের এই নির্বাচনে বিপুলভাব জয়ী হওয়ার পর শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় কনিষ্ঠতম সদস্য ছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার ষড়যন্ত্র করে এই মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয় এবং বঙ্গবন্ধুর স্থান হয় কারাগারে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের চতুর্থ খণ্ডে বলা হয়, ‘৫ জুন আতাউর রহমান খান ও বেগম শেখ মুজিবুর রহমান বিচারাধীন বন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সাক্ষাৎ করেন। এ সময়ে শেখ মুজিবুর রহমান স্ত্রীকে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে এবং সন্তানদের যত্ন নিতে বলেন।’

গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ২১ জুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তিনটি শিশু সন্তান নিয়ে একজন গোয়েন্দার উপস্থিতিতে স্বামীর সঙ্গে ২০ মিনিট কথা বলেন। সাত বছরের শেখ হাসিনা, পাঁচ বছরের শেখ কামাল ও এক বছরের শেখ জামালের জন্য সম্ভবত এটাই ছিল প্রথম কারাগার দেখা।

কারাগারে পরবর্তী সাক্ষাৎ ঘটে ২০ জুলাই, ১৯৫৪। বঙ্গবন্ধুর মা রত্নগর্ভা সায়েরা খাতুন এবং বেগম ফজিলাতুন্নেছা উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনাসহ তিন সন্তান নিয়ে বেগম মুজিব জেল গেটে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ২৫ আগস্ট, ১৪ সেপ্টেম্বর, ৪ অক্টোবর ও ৩১ অক্টোবর দেখা করেন। প্রতিটি ‘দেখা’ ২০ মিনিটের, গোয়েন্দার উপস্থিতিতে। তিন সন্তানসহ বেগম মুজিবের পরের সাক্ষাৎ ছিল ১১ নভেম্বর। ২৯ নভেম্বর বেগম মুজিব স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন, ২০ মিনিটের এই সাক্ষাৎ ঘটে সেই দিনই। এ সময়ে বঙ্গবন্ধুর মা সায়েরা খাতুন, বঙ্গবন্ধুর তিন সন্তানসহ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় উপস্থিত ছিলেন। ১৮ ডিসেম্বর, ১৯৫৪ তারিখ বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন।

এরপর পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এক প্রাদেশিক সরকার গঠিত হয় ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন আতাউর রহমান খান। বঙ্গবন্ধুর হাতে আসে শ্রম, দুর্নীতি দমনসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দফতর। কিন্তু বঙ্গবন্ধু দলের কাজে অধিক সময় প্রদানের প্রবল ইচ্ছা থেকে ১৯৫৭ সালের ৩১ মে মন্ত্রিসভার সদস্য পদে ইস্তফা দেন, যা গ্রহণ করা হয় ২ মাস ৮ দিনের মাথায়, ৮ আগস্ট তারিখে।

১৯৫৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৫৮ সালের ১১ ডিসেম্বর, এ সময়টি বঙ্গবন্ধু মুক্ত জীবনে কাটিয়েছেন। একটানা চার বছর কিছুটা হলেও পরিবারের সান্নিধ্যে থেকেছেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রের রাজনীতি পাকিস্তানকে ঠেলে দেয় অন্ধকার যুগে।

১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর জারি হয় সামরিক শাসন, বঙ্গবন্ধু তখন পশ্চিম পাকিস্তানে দলীয় কাজে। পরদিন তিনি করাচি থেকে ঢাকায় ফেরেন। তাকে গ্রেফতার করা হয় ১২ অক্টোবর। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবও ফিরে যান সেই পুরনো রুটিনে, স্বামীকে দেখার জন্য নাজিমুদ্দিনে রোডের জেলগেটে নিয়মিত হাজির হওয়া হয়ে ওঠে তার অপরিহার্য কাজ। এই পর্ব চলে এক বছরের বেশি, ১৯৫৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পঞ্চম খণ্ড থেকে জানা যায়, এবার গ্রেফতারের ৮ দিন পর, ১৯৫৮ সালের ২০ অক্টোবর, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ডেপুটি আইজি-আইবির কাছে প্রতি সপ্তাহের মঙ্গল ও শনিবার স্বামীর সঙ্গে জেল গেটে দেখা করার অনুমতি প্রদানের আবেদন করেন।

সামরিক শাসনামলে জেল গেটে দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে ৩০ অক্টোবর। পরের সাক্ষাতের তারিখ ছিল ২০ নভেম্বর। বেগম ফজিলাতুন্নেছা এবং হাসিনা, কামাল ও জামালের সঙ্গে ছিলেন রেহানা। এই প্রথমবারের মতো কারাগার দর্শন ঘটে শিশু রেহানার, আবেদনের স্থানে তার বয়স লেখা ২ বছর। শেখ হাসিনার বয়স লেখা ১০ বছর ১১ মাস (আনুমানিক)। পরের সাক্ষাৎ ছিল ২৮ নভেম্বর। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, বেগম মুজিব তার স্বামীকে এসময় বলেন, সিদ্ধেশ্বরী এলাকার কোয়ার্টারে সন্তানদের নিয়ে বসবাস করা সম্ভব নয়। এলাকাটি ঝোপ-জঙ্গলে ভরা। পানির কষ্ট। তিনি দালালদের মাধ্যমে নতুন একটি বাড়ি ভাড়া নিতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সকলে বলছে, শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারকে বাড়ি ভাড়া দিলে বিপদ হবে। শেখ মুজিব স্ত্রীকে বলেন, উপযুক্ত বাড়ি না পেলে ছেলেমেয়েদের ফাইন্যাল পরীক্ষার পর যেন টুঙ্গিপাড়া গ্রামের বাড়ি চলে যায়। এসম পিস্তলের লাইসেন্স নবায়ন কিংবা সরকারের কাছে হস্তান্তর এবং ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকায় সরকারের কাছ যে জমি কেনা হয়েছে তার কিস্তির টাকা পরিশোধের বিষয়েও আলোচনা হয়। পরের সাক্ষাতে (৬ ডিসেম্বর, ১৯৫৮) বেগম মুজিবের সঙ্গী ছিলেন শুধু শেখ জামাল। এ মাসেই আরও দুবার (১৭ ও ২১ ডিসেম্বর) বেগম মুজিব জেল গেটে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন। ৬ জানুয়ারির (১৯৫৯) সাক্ষাতের সময় সন্তানদের মধ্যে শুধু শেখ কামাল উপস্থিত ছিলেন। এ সময় একজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন, যার সাহায্যে বঙ্গবন্ধু অ্যান্টি করাপশন বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী সম্পত্তির বিবরণ তৈরি করেন।

পরের সাক্ষাতের তারিখ ছিল এভাবে, ১৯৫৯ সালের ১২ জানুয়ারি (চার সন্তানসহ), ২৭ জানুয়ারি (শ্বশুর শেখ লুৎফর রহমান ও ২ সন্তানসহ), ১২ ফেব্রুয়ারি (সন্তানদেরসহ), ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ১২ মার্চ। শেষের সাক্ষাতে শেখ মুজিবুর রহসান স্ত্রীকে কম খরচে একটি বাসা ভাড়া নেওয়া ও জিপ গাড়িটি বিক্রির পরামর্শ দেন।

এরপর, ১৯৫৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর মুক্তির আগ পর্যন্ত আরো ২২ বার জেলখানায় তার সঙ্গে দেখা করতে যান যান বেগম ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিব। এ পর্যায়ে বেগম মুজিবের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সর্বশেষ সাক্ষাৎ ঘটে ১৭ ডিসেম্বর এবং এদিন বিকালেই তিনি কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন। ২৪ ডিসেম্বর বিভিন্ন জেলায় সামরিক শাসকদের সতর্কবার্তা যায়, শেখ মুজিবুর রহমানের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে হবে।

আলফা ইন্সুরেন্সে চাকরি নেওয়ার পরের দিনগুলি

সামরিক শাসনের যাতাকলের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর নতুন জীবন শুরু হয়। তিনি সরকারকে ধোকা দিতে আলফা ইন্সুরেন্সে চাকরি নেন, অফিস করেন বর্তমান গুলিস্তান এলাকায়। সুকৌশলে এই স্থানটিকে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতে থাকেন। তবে এসময়ও একের পর এক রাজনৈতিক মামলা মোকাবিলা করতে হয়। তিনি এবং তার স্ত্রী এটাও জানতেন, এই মুক্তজীবন দীর্ঘস্থায়ী হবে না। তাই একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই চাইছিলেন তারা। এর ফলশ্রুতিতেই ১৯৬১ সালের ৮ অক্টোবর উঠে যান ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাসভবনে। এটি তখনও অসমাপ্ত, কিন্তু দ্রুতই পরিণত হয়ে যায় বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীকে।

১৯৫৯ সালের শেষ দিকে জেল থেকে মুক্ত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু বাঙালির নিজস্ব স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়ে ওঠেন। ১৯৬২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মুক্তির দাবিতে প্রবল ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। ফলে আইয়ুব খানের নির্দেশে ৭ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি এবার মুক্তি পান ১৮ জুন। এ সময়ে শিক্ষা আন্দোলনে যুক্ত থাকার দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের ভিপি এম. এ. ওয়াজেদ মিয়াও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। তিনি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থে লিখেছেন, জেল গেটে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সাক্ষাতের দিনেই রংপুর থেকে তার বাবাও এসেছিলেন তার সঙ্গে দেখা করতে। বঙ্গবন্ধু সে সময়ে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও শেখ হাসিনার সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন।

১৯৬২ সালের বন্দি জীবনের আগেও ১৯৬০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর এক মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানকে দুই বছর কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের কারণে ২২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিনে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৬৪ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধুকে দুবার গ্রেফতার করা হয়। এই কারাজীবন ছিল স্বল্প স্থায়ী।

ছয় দফা ঘোষণা এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিব

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মোট ৪৬৮২ দিনের কারাজীবনের ভয়ঙ্কর অধ্যায় শুরু হয় ১৯৬৬ সাল থেকে। ছয় দফা ঘোষণার পর জেলা-মহকুমা-থানায় একের পর এক জনসভা, পথসভা ও কর্মী সমাবেশে বক্তব্য দেন। এবছরই আওয়ামী লীগের সভাপতি হন তিনি। তাকে নিবৃত করার জন্য দায়ের হতে থাকে মামলা। ৮ মে নারায়ণগঞ্জে জনসভা শেষে ঢাকা ফেরার পর, বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাকে ধানমন্ডি বাসা থেকে দেশরক্ষা আইনে গ্রেফতার করা হয়। দায়ের হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। কিন্তু ১৯৬৯ সালের শুরু শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে প্রবল ছাত্র-গণ আন্দালন গড়ে ওঠে। ফলে মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য হয় সরকার। তিনি মুক্ত হন ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। পরদিন, ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) ময়দানে লাখ লাখ মানুষ প্রিয় নেতাকে বরণ নেয় 'বঙ্গবন্ধু' হিসেবে।

প্রায় দুই বছর ৮ মাসের এই জেল জীবনের সময় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও ক্যান্টনমেন্টে সন্তানদের নিয়ে স্বামীর সঙ্গে অনেক বার সাক্ষাৎ করেছেন। এক পর্যায়ে শেখ হাসিনার স্বামী ড. এম. এ. ওয়াজেদ মিয়াও সাক্ষাৎ প্রার্থীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। এই সময়ের সাক্ষাতের কিছু বিবরণ মেলে ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থে।

কারাগারের রোজনামচা লেখা শুরু হয়েছে ১৯৬৬ সালের ২ জুন থেকে। এরপর বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে ৯ জুন। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘জমাদার সাহেব এসে বললেন, আপনার ইন্টারভিউ আছে, বেগম সাহেবা ছেলেমেয়ে নিয়ে এসেছেন। হঠাৎ এলো, ব্যাপার কী! আজকাল তো ১৫ দিনের কমে দেখা করতে দেয় না। ... ছোট ছেলেটা পূর্বের মতোই ‘‘আব্বা’’ ‘‘আব্বা’’ বলে চিৎকার করে উঠল।’

শেখ রাসেলের কারাগার ‘দেখার’ এটাই প্রথম উল্লেখ। পরের ‘দেখা’র বিবরণ রয়েছে ১৫ জুন। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন ‘১৮ মাসের রাসেল জেল অফিসে এসে একটুও হাসে না, যে পর্যন্ত আমাকে না দেখে।... এখন ওর ধারণা হয়েছে এটা ওর আব্বার বাড়ি।... ছোট মেয়েটার শুধু একটা আবদার। সে আমার কাছে থাকবে। আর কেমন করে থাকি তা দেখবে।... হাচিনার কলেজ বন্ধ, তাই খুলনা যেতে চায়।... জামালের শরীর খারাপ, গলা ফুলে গেছে।’

বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ৬ জুলাই সিকিউরিটি জমাদার এসে বলেন, ‘চলিয়ে, বেগম সাহেবা আয়া।’ ২৬ জুলাই ‘দেখা’ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘রেণু আমার বড় মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব এনেছে... আমার মতামত চায়।’ ৩ আগস্ট লিখেছেন, ‘দেখা’ এসেছে। আমার স্ত্রী ছোট বাচ্চা নিয়ে এসেছে। ৭ সেপ্টেম্বর লিখেছেন, ‘রেণু দেখা করতে এসেছিল। রেহানার জ্বর, সে আসে নাই। রাসেল জ্বর নিয়ে এসেছিল। হাসিনার বিবাহের প্রস্তাব এসেছে।... মেয়েটা এখন বিবাহ করতে রাজি নয়। কারণ আমি জেলে, আর বিএ পাশ করতে চায়।’

১৯৬৭ সালের ১১ জানুয়ারি ঈদের দুদিন আগের ‘দেখা’ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, 'রেণু এসেছে ছেলেমেয়ে নিয়ে দেখা করতে। আগামী ১৩ তারিখ ঈদের জামাত। ছেলেমেয়েরা ঈদের কাপড় নেবে না। ঈদ করবে না। ঈদ করবে না, কারণ আমি জেলে।... জীবনে বহু ঈদ এই কারাগারে আমাকে কাটাতে হয়েছে, আরও কাটাতে হয় ঠিক কী!' এই ঈদের পরদিন বেগম মুজিব বিশেষ অনুমতি নিয়ে কারাগারে স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এ বছরের ১৭ মার্চ জন্মদিনে বঙ্গবন্ধু তার পরিবারের সদস্যদের ‘দেখা’ পেয়ে লিখেছেন, ‘ছোট মেয়েটা আর আড়াই বছরের ছেলে রাসেল ফুলের মালা হাতে করে দাঁড়াইয়া আছে। মালাটা নিয়ে রাসেলকে পরাইয়া দিলাম। সে কিছুতেই পরবে না, আমার গলায় দিয়ে দিল।’ পরের সাক্ষাতের বিবরণ রয়েছে ১৪ এপ্রিল। এই দেখা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ১৪ দিনে একদিন ‘দেখা’ আইনে আছে, তাই বোধ হয় তিনি (পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান) বন্ধ করেন নাই মেহেরবানি করে। সংসারের অনটন প্রশ্নে বেগম মুজিব স্বামীকে বলেন, ‘যদি বেশি অসুবিধে হয় নিজের বাড়ি ভাড়া দিয়ে ছোট বাড়ি একটা ভাড়া করে নিব।’ ২৮ এপ্রিলের ‘দেখা’ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘বহুদিন পরে ছেলেমেয়েদের ও রেণুর সাথে প্রাণ খুলে কথা বললাম। প্রায় দেড় ঘণ্টা।’ একটি মামলায় শাস্তি হওয়ায় এ সুবিধা! কারা আইনে বিনাবিচারে আটক নিরাপত্তা বন্দি হলে সাক্ষাতের সময় গোয়েন্দা উপস্থিত থাকে, কিন্তু সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের ক্ষেত্রে সেটা ঘটে না। তিনি সন্তানদের বলেন, ‘আমি তো সারাজীবনই বাইরে বাইরে অথবা জেলে জেলে কাটাইয়াছি তোমার মা’ই সংসার চালাইয়াছে।’

পরের দুটি সাক্ষাৎ ঘটে ১৭ ও ২৭ মে (১৯৬৭)। ড. এম. এ. ওয়াজেদ মিয়া ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশের রাজনীতি’ গ্রন্থে লিখেছেন, হাসিনার সঙ্গে বিয়ের পরদিন ১৮ নভেম্বর ‘জেল গেটের কাছেই আমাদের একটি কক্ষে বসানো হয়।... একটু পর শেখ সাহেবকে উক্ত কক্ষে আনা হয়।’

১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টের নির্জন সেলে স্থানান্তর করা হয়। মোট ৩৫ জন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি, ১ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমান। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘‘একাকী কামরায় রাত্রদিন থাকা যে কি ভয়াবহ অবস্থা তাহা ভুক্তভোগী ছাড়া বুঝতে পারবে না।... সূর্যের আলোও গায়ে স্পর্শ করার উপায় নাই।'

ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া লিখেছেন, ‘এপ্রিল মাসে (১৯৬৮) বঙ্গবন্ধু ক্যান্টনমেন্টে আছেন, খবর পাওয়া যায়। ... একদিন সকাল বেলা সাদা পোশাক পরিহিত দুজন কর্মকর্তা বাসায় এসে আমাদের জানায় যে, সেদিন বিকেল তিনটায় শাশুড়ি ও তার ছেলেমেয়েদের শেখ সাহেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য অনুমতি দিয়েছেন।... শাশুড়ি, হাসিনা, শেখ কামাল, শেখ জামাল, রেহানা ও শিশু রাসেলকে যথাসময়ে সাক্ষাৎকারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। ... দুই সপ্তাহ পর আবার সাক্ষাৎকারের অনুমতি দেওয়া হয়। ওই তালিকায় শেখ সাহেবের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আমাকেও প্রথম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর পরবর্তীতে প্রতি সপ্তাহের সাক্ষাতের অনুমতির তালিকায় কেবল দুই সপ্তাহ পর পর আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হতো।’

আগরতলা মামলা চলেছিল ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ক্যান্টনমেন্টে আট মাসের বেশি বন্দি জীবনে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অন্তত ৩০-৩৫ বার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বিশেষ অনুমতি নিয়েও সাক্ষাতের ঘটনা ঘটেছে।

ড. ওয়াজেদ মিয়ার গ্রন্থ থেকে আমরা জানতে পারি, ১৯৬৯ সালের শুরুতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ঐতিহাসিক ১১ দফার ভিত্তিতে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তার প্রস্তুতি পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে পরামর্শ-নির্দেশনা সংগ্রহ করায় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ হাসিনা ও ড. এম. এ. ওয়াজেদ মিয়া সাক্ষাৎকারের সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন।

পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের একমাত্র জাতীয় নির্বাচনে জেতার পরও, ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে বন্দি রাখা হয় পরিবার ও স্বজন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায়। পশ্চিম পাকিস্তানের জেলে নিঃসঙ্গ সময় কেটেছে তার। নিশ্চই পরবর্তীতে বেগম মুজিবের সঙ্গে সেই দিনগুলি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে তার।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত