স্বাধীনতাকে যারা ব্যর্থ করতে চেয়েছিল আজ তারাই ব্যর্থ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

3559

Published on জানুয়ারি 10, 2021
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করতে চেয়েছিল, আজ তারাই ব্যর্থ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রোববার আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় বক্তব্য রাখেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে সারাবিশ্বে যে মর্যাদা পেয়েছে, এই মর্যাদা ধরে রেখে আমরা বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব।

“জঙ্গিবাদ,সন্ত্রাস এগুলোর হাত থেকে দেশকে মুক্ত রেখে ক্ষুধামুক্ত,দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। জাতির পিতার এই প্রত্যাবর্তন দিবসে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা যে এই জাতি বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে।”

সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের অভ্যুদয় হলেও তখনও পাকিস্তানে বন্দি ছিলেন স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার মুক্তি দিলে যুদ্ধে বিজয়ের ২৪ দিন পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি নিজের স্বপ্নের স্বাধীন দেশে পা রাখেন বঙ্গবন্ধু। তখন থেকে দিনটি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু যে পরিবারের কাছে না গিয়ে জনগণের কাছে প্রথম গিয়েছিলেন, তা ‍উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

“আমার আব্বা কিন্তু আমাদের কাছে আসেন নাই। তিনি কিন্তু জনগণের কাছে আগে গিয়েছিলেন। বাংলার মানুষকে তিনি সব থেকে বেশি ভালোবাসতেন। সেই মানুষের কাছেই তিনি ছুটে গিয়েছিলেন।”

পাকিস্তানে নয় মাস বন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর উপর যে অত্যাচার-নির্যাতন চলেছিল, তাতে তার স্বাস্থ্যর অবনতি হওয়ার কথা বলেন শেখ হাসিনা।

“৪০ পাউন্ড ওজন তার কমে যায়। তারপরও তিনি সেই কারাগার থেকে বন্দিখানা থেকে তিনি চলে যান লন্ডন। সেখানে প্রেস কনফারেন্স করেন। প্রাইম মিনিস্টার এডওয়ার্ড হিথের সাথে দেখা করেন। আমাদের প্রবাসীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখান থেকে তিনি দিল্লি হয়ে আসেন।”

দেশে ফেরার দিন রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতার ভাষণ স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পরিচালনা করার সমস্ত দিক-নির্দেশনা ওই ভাষণে আছে। সেখানে কিন্তু তার হাতে লেখা কাগজ-টাগজ কিছুই নেই। তিনি যা বলেছেন, নিজের মন থেকে বলেছেন।

“একজন মানুষ একটা জাতির প্রতি, মানুষের প্রতি কতটা নিবেদিত হতে পারে, মানুষকে কতটা ভালোবাসতে পারলে এইভাবে আত্মত্যাগ করতে পারে। আমি বলব, আমাদের আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী, সকলের এই ভাষণগুলো আবার নতুন করে শোনা উচিত। আমাদের নতুন প্রজন্মের শোনা উচিত। তাহলে রাজনীতি করার একটা প্রেরণা এবং দিক-নির্দেশনা সবাই পাবে।”

যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশকে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুর তৎপরতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন,

“তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি দিয়েছিলেন। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে তৈরি করা যেই শাসন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে গণমুখী ব্যবস্থা তিনি করবার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

“আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশের কিছু মানুষ এত বেশি বুঝে ফেলে … তাদের অপপ্রচার, তাদের অপকর্ম সেই সময় নানাভাবে ব্যতিব্যস্ত করে তোলার… যা কিছু করতে যান, সেখানে বাধা দেওয়া। স্বাধীনতাবিরোধীরা তো সব সময় সক্রিয় ছিল।

অনুষ্ঠানে শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতার আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে দাঁড়াক,বাংলাদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে চলুক, সম্মান নিয়ে চলুক, এটা স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত শক্তি কখনও চায়নি। তারা কেবল জাতির পিতাকে হত্যাই করেনি, সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত আদর্শ থেকে বাংলাদেশকে বিচ্যুত করেছিল ।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতা এই জাতিকে ভালোবেসেছেন। আমাদের একটাই চিন্তা যে জাতির জন্য আমাদের মহান নেতা জীবন দিয়ে গেছেন সেই জাতির কল্যাণ করা, তাদের জীবন সুন্দর করা। এটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমি কিন্তু কাজ করে যাচ্ছি।

দেশের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “২১০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়ন কীভাবে হবে, সেই পরিকল্পনা ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি। প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় ২০৪১ সালে বাংলাদেশ কেমন হবে সেটা দিয়েছি।

“২০৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপন হবে। আমাদের আগামী প্রজন্ম কীভাবে তা উদযাপন করবে, সেই কথা চিন্তা করেই আমরা কিন্তু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। সেগুলো আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”

করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।

এই সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক,আবদুল মতিন খসরু, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ,সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক.এস এম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত