1074
Published on মার্চ 7, 2022প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকের প্রজন্মের কাছে বিশ্বটা উন্মুক্ত। তাদেরকে আর বিভ্রান্ত করা যাবে না। হয়ত ২১ বছর করতে পেরেছিল কিন্তু এখন আর পারবে না। প্রযুক্তির এই যুগে আর অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া যাবে না। বাঙালি এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ৭ মার্চের ভাষণ যুগ যুগ ধরে বাঙালিকে প্রেরণা দিয়ে যাবে, একটা চিরন্তণ ভাষণ হিসাবে বিশ্বের বুকে উদ্ভাসিত থাকবে।
সোমবার (৭ মার্চ) সকালে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ২০২২ উদযাপন উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে ভাষণ বাঙালি জাতিকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। একটি ভাষণের মধ্য দিয়ে একটি জাতি উদ্বুদ্ধ হয়েছিল সশস্ত্র গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার এবং স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার। এই ভাষণের মধ্য দিয়ে একদিকে আমরা পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি হওয়ার পর দীর্ঘ ২৩টি বছর যে শোষণ বঞ্চনার শিকার হয়েছিল বাঙালি জাতি যে অত্যাচার নিপীড়ন সহ্য করেছিল, নিজের অধিকারে কথা বলতে গিয়ে গুলি খেয়ে জীবন দিয়েছিল, সেই কথাগুলি তিনি ব্যক্ত করেছেন। একইসঙ্গে ঠিক ওই মুহূর্তে কী কী করণীয়, সেই নির্দেশনাও জাতিকে তিনি দিয়েছিলেন। অর্থ্যাৎ অসহযোগের যে আন্দোলনের ডাক দেন বাংলাদেশের মানুষ তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল।
১৫ আগস্টের পর ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর এই বাঙালি জাতি স্বাধীনতার বিকৃত ইতিহাস শুনেছে। আর ২১ বছর ধরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লাখো শহিদের রক্ত দান, আমাদের সংগ্রাম সবকিছু ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আজকে এটা প্রমাণিত সত্য যে সত্যকে কেউ কখনো মুছে ফেলতে পারে না। আর ৭ মার্চের ভাষণেই তো জাতির পিতা বলে গেছেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। তাই বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারে নাই।
সব বাধা পেরিয়ে ৭ মার্চের ভাষণ এখন বিশ্ব প্রামাণ্য দলিলে স্থান করে নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে স্বাধীনতার জন্য যত ভাষণ দেওয়া হয়েছে, তার কোনোটাই কিন্তু পুনরাবৃত্তি হয়নি কখনো। যেদিনের ভাষণ সেদিনেই এটা শেষ হয়েছে। কিন্তু এই ভাষণটা আজকের আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর। এই ৫০ বছর পর্যন্ত কিন্তু এই ভাষণটা বারবার আমাদের প্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে। কেউ হিসাব করে বের করতে পারবে না, কত ঘণ্টা কত মিনিট কত দিন এই ভাষণটা বাজানো হয়েছে। এটার হিসাব করাটাই হবে একটা কঠিন ব্যাপার। যুগ যুগ ধরে এটাকে আমরা শুনছি এবং বাজানো হচ্ছে।
‘যতই বাধা দেয়া হয়েছে, ততই যেন এই ভাষণটা আরও উদ্ভাসিত হয়েছে। এখনো এই ভাষণ আমাদেরকে অনুপ্রেরণা দেয়। যে ভাষণের প্রতিটি লাইনই হচ্ছে এক একটা যেন কবিতার অংশ। যা মানুষের ভিতরে, অন্তরে একটা অন্য অনুভূতি নিয়ে এসে দেয়, প্রেরণা দেয়।’- বলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা যখন যুদ্ধ করেছে, এই ভাষণটাই ছিল তাদের প্রেরণা এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এটা নিয়মিত এই লাইন বাজানো হতো। জাতির পিতা তার ভাষণ শেষ করেছেন জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে। বাঙালির জয়, বাংলাদেশের জয়, বাংলার মানুষের জয়। এই জয় বাংলা স্লোগানটা প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা যখনই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, শত্রুকে আঘাত করতে গেছে, এই জয় বাংলা স্লোগান দিয়েই তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে বলেও অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে যারা বন্দি হয়েছে, দিনের পর দিন অত্যাচারিত হয়েছে, এই জয় বাংলা স্লোগান যাতে না বলে তার জন্য যত অত্যাচার করেছে, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই স্লোগানটাই দিয়ে গেছে তারা। একটি জাতির জীবনে এই যে ঘটনাগুলি কত বড় আত্মত্যাগ, সবকিছু কিন্তু একসময় মুছে ফেলার চেষ্টা কেরা হয়েছিল। তবে আমার আত্মবিশ্বাস আর কোনোদিন এই ইতিহাস মুছে ফেলতে পারবে না। এটা একটা চিরন্তর ভাষণ হিসাবে বিশ্বের বুকে উদ্ভাসিত থাকবে।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে সভায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে সভায় বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল মনসুর।
খবরঃ সারাবাংলা