ঐতিহাসিক দিনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা

1958

Published on এপ্রিল 17, 2020
  • Details Image

আজ ঐতিহাসিক ১৭ এপ্রিল। এইদিনে মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথ তলার আম্রকাননে বাংলাদেশের মুক্তিপাগল সাড়ে সাত কোটি মানুষের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। স্বাধীনতার এক বছর পর একই দিনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। কমিটির সভাপতি হন শেখ মুজিবুর রহমান, আর সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলের সাংগঠনিক কমিটির ৪৪ জন সদস্যের নাম ঘোষণা করেন। গণপরিষদ সদস্য জিল্লুর রহমান এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, সেই ক্ষমতা বলে তিনি দলের সাংগঠনিক কমিটি গঠন করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে দলের সভাপতি পদে বহাল রাখার জন্য উক্ত কাউন্সিল অধিবেশনে অনুরোধ করা হয়েছিল।

আজ ঐতিহাসিক দিন

দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত ১৭ এপ্রিলের সংবাদে বলা হয়, ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্ত যায়, আবার ১৯৭১ সালের এই দিনে আরেক আম্রকাননে স্বাধীনতা ঘোষিত হয়। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আশীর্বাদপুষ্ট পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের মুখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে একটি রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয় এইদিনে। ১০ সহস্রাধিক মানুষের গগনবিদারী স্লোগান, বিপুল করতালি আর উল্লাসের মধ্যে এই স্বাধীনতা সনদটি পাঠ করেন আওয়ামী লীগের তদানীন্তন পার্লামেন্টারি পার্টির চিফ হুইপ ইউসুফ আলী।

শাসনতন্ত্র কমিটির প্রথম বৈঠক

বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটির প্রথম সভা আজ (১৭ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁওয়ে গণপরিষদ ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির চেয়ারম্যান আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ড. কামাল হোসেন এতে সভাপতিত্ব করেন। বাংলাদেশ গণপরিষদের অধিবেশনে এই কমিটির গঠন করা হয়। শাসনতন্ত্র ১০ জুন পেশ করা হবে।

খসড়া শাসনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটির প্রথম বৈঠকে ভাষণদানকালে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘শাসনতন্ত্রে চারটি মূলনীতি গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র প্রতিফলিত হবে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি ও সামাজিক চাহিদা পূরণে শাসনতন্ত্র পর্যাপ্ত সংশোধনের সুযোগ থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান শাসনতন্ত্র প্রণয়নে জনগণের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হবে বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা কামাল হোসেন উল্লেখ করেন। কমিটির সদস্যদের সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে শাসনতন্ত্র সম্পর্কে জনমত চাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ড. কামাল হোসেন বৈঠকে তার উদ্বোধনী ভাষণে সদস্যদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। এবং বলেন, ‘জনগণ ও গণপরিষদের বিবেচনার জন্য শাসনতন্ত্র আমাদেরকে আগামী ৫৩ দিনের মধ্যে সমাপ্ত করতে হবে।’ ৩৪ জন সদস্যের মধ্যে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ৩০ জন।

ভুটান সফরের আমন্ত্রণ

বঙ্গবন্ধু ভুটান সফরে আমন্ত্রিত হন এই দিনে। ভুটানের রাজা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে ভুটান সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে বার্তা পাঠান। বাসসের খবরে বলা হয়, ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তসেরিং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার পর বলেন, ‘আমরা আপনাদের দেশকে ভুটানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাষ্ট্র বলে মনে করি। বাংলাদেশে আসতে পেরে আমরা খুব খুশি হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আগ্রহের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সফরের জন্যে প্রতীক্ষা করবো।’

পাকিস্তানে আটকে পড়াদের ফেরানোর উদ্যোগ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ পাকিস্তানে আটক চার লাখ বাঙালিকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পাকিস্তানের ওপর প্রভাব খাটানোর জন্য ব্রিটিশ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত গোল্ডসের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়। ১৭ এপ্রিলের বাসসের খবরে প্রকাশ, ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত গোল্ডস পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং এ সময় সামাদ আজাদ ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের কাছে পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের দুঃখ-দুর্দশার কাহিনি বর্ণনা করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান যে, ব্রিটেন ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে বসবাসকারী বাঙালিদের নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন। এসব সমস্যা সমাধানে তিনি ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত